খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি দুই আঞ্চলিক সংগঠনের কর্মসূচির মধ্যে মুখোমুখি হওয়ায় একে অপরের সাথে সশস্ত্র হামলা ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে শহরের চেঙ্গী স্কয়ার মোড়ে ইউপিডিএফ-প্রসীত এবং ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় পূর্ণমুখী চাকমা (৫৩) নামের একজন নারী আহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউপিডিএফ-প্রসীত গ্রুপ।
ইউপিডিএফ-প্রসীত থেকে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জানানো হয়, নির্বিচারে ছোঁড়া গুলিতে খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়ার পূর্ণমুখী চাকমা (৫৩) আহত হয়েছেন। তার স্বামীর নাম শরবিন্দু চাকমা। মঙ্গলবার নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃত্তিতে অবিলম্বে হামলাকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।
ইউপিডিএফ দু’পক্ষের এই সশস্ত্র মুখোমুখি হামলা ও ধাওয়ার সময়ে মোবাইলে সংগৃহিত ভিডিওতে কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেলেও উভয় পক্ষের কেউ তা স্বীকার করেননি। এভাবে শহরে প্রকাশ্যে মুখোমুখি এবং হামলা ও গুলির ঘটনা জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে জেলা সদরের চেঙ্গী স্কোয়ার ও স্বনির্ভর এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
জানা যায়, পাহাড় ও সমতলে গণতান্ত্রিক শক্তি এক হও শ্লোগানে পাহাড়ের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের দাবিতে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করে ইউপিডিএফ-প্রসীত সমর্থিত খাগড়াছড়ি ইউনিট। অপরদিকে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে আরেকটি কর্মসুচির জন্যে মহাজন পাড়ার লারমা স্কোয়ারে জড়ো হন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সমর্থকরা।
এক পক্ষ উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে চেঙ্গী স্কোয়ারে আসলে অপর দিকে থেকে আরেকটি পক্ষ মিছিল নিয়ে সেখানে মুখোমুখি হয়ে পড়ে। এরমধ্যেই ইউপিডিএফ-প্রসীত গ্রুপের মিছিলকারীরা ব্যানার ছেড়ে ছুটোছুটি ও দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ ঘটনার জন্য পাল্টা পাল্টি অভিযোগ করেছে একে অপরকে।
মুহুর্তের মধ্যে এমন পরিস্থিতি হওয়ায় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিলে পরে সেখানে নিরাপত্তা বাড়ায় পুলিশ। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
ইউপিডিএফ’র জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার গেলেও পাহাড়ে ফ্যাসিবাদী যায়নি। ঠ্যাঙারে বাহিনী দিয়ে ইউপিডিএফ-প্রসীত সমর্থকদের থামানোর চেষ্টা চলছে।
অপরদিকে, ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক অমর চাকমা জানান, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে মিছিল বের করতে চাইলে প্রতিপক্ষ তাদের উপর ইট পাটকেল ছুঁড়ে। গুলির ঘটনা জানেন না বলছেন তিনি।
সমাবেশে অংশ নিতে আসা অনেক সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানান। একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “সমাবেশে আসলেও সমস্যা, না এলেও সমস্যা। ইউপিডিএফ জোর করে আমাদের নিয়ে এসেছে। এখন গুলি খাচ্ছি আমরা। আমরা সাধারণ পাহাড়িরা কোথায় যাব?”
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর প্রভাব বিস্তার ও চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব, কোন্দল ও সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।