ডেস্ক রির্পোট:- রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা–কদমতলী, হোসনাবাদ ও কোদালা ইউনিয়নের ৩ হাজার ৩০০ একরের বিশাল এলাকা নিয়ে কোদালা বনবিটের অবস্থান। এই বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে সবুজ আচ্ছাদিত বনভূমি। যেখানে রয়েছে ১৯৫২ সালে বনায়নকৃত সংরক্ষিত সারি সারি সেগুন বাগানসহ বিভিন্ন মূল্যবান বৃক্ষরাজি। এছাড়া দেশের বৃহৎ পক্ষীশালা রাঙ্গুনিয়া এভিয়ারি এন্ড ইকো পার্ক এই বিটের আওতার মধ্যে পড়েছে। এরমধ্যে আবার ৭০ একর বনভূমি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ে। কিন্তু এতো বিশাল এলাকাজুড়ে বন রক্ষার দায়িত্বে বিট কর্মকর্তাসহ পাহারাদার রয়েছেন মাত্র চারজন। অথচ একসময় এই বিশাল বনরক্ষায় ১৫–২০ জনের জনবল ছিলো বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এতে গেল কয়েক দশক ধরে বনের ভেতর হাজারো ভবন–বাড়িঘর গড়ে ওঠেছে। নিয়মিত চলছে পাহাড় কাটা আর বনের মূল্যবান গাছ কেটে নেয়ার মতো ঘটনা। এমনকি সমপ্রতি বনকর্মীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনের মূল্যবান সেগুন গাছ কেটে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের পাশ ঘেঁষে এ বিটের অফিস। অফিসের সামনে চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের পাশ দিয়ে বিটের বিশাল বিশাল সেগুন গাছের সারি। একেকটি সেগুন গাছের বাজার মূল্য প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মতো। চলতি বছরের ৬ মার্চ বন খেকোরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২৪টি সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যায়। এভাবে ৩ হাজার ৩০০ একর সংরক্ষিত এই বনভূমির মধ্যে কমপক্ষে দেড় হাজার একর ভূমি গত ৫০ বছরে ভূমি দস্যুরা দখলে নিয়ে হাজার হাজার পাকা দালানসহ ৪–৫ তলা বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। বন আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এসব ভবন বা স্থাপনা কোনোভাবেই থাকার সুযোগ নেই।
স্থানীয়রা জানান, সংরক্ষিত এ বিটের উঁচু পাহাড় থেকে রাতে ও দিনে মাটি কেটে পাচার করছে একাধিক সিন্ডিকেট। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুকুর–জলাশয় ভরাট, বাড়িঘরের মাটি এ বাগান থেকে নেয়া হয়। কমপক্ষে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাকে মাটি পাচার করে এলাকার কয়েকটি সিন্ডিকেট। গভীর রাতে বিশাল সংরক্ষিত বাগান থেকে সেগুন গাছ কেটেও পাচার করছে কয়েকটি কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট। এসব অপরাধ সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তার যোগসাজশে কিংবা তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে করা হচ্ছে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের ধারণা।
তবে বন কর্মকর্তারা বলছেন, দায়িত্ব পালনের সময় বন প্রহরীদের সবার কাছে প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গুলি থাকে না। নিরস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সময় প্রহরীরা বনদস্যুদের মারধরের শিকার হন। বনাঞ্চল রক্ষায় প্রহরীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন তারা।
কোদালা বনবিট কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘এতো বিশাল বনাঞ্চলে আমিসহ ৩ জন বনপ্রহরী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন রক্ষা করে চলেছি। গত পাঁচ মাস আগে আমি যোগদানের পর বনদস্যুদের নামে ২৫টির অধিক মামলা দিয়েছি। কোর্টে মামলা দিলে যাদের নামে মামলা হয় তারা জেনে যায়। তারা এসে আমাদের হুমকি দেয়। বনখেকোদের হাত থেকে রেহাই পায় না বন প্রহরীরাও। তাদের মারধর করে সন্ত্রাসীরা। তারপরও গাছ কাটার খবর পেলেই রাতে অভিযান চালিয়ে এমনকি প্রয়োজনে গুলিও করি। এছাড়া নিয়মিত মামলা দেয়াতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও গাছ চুরির ঘটনা কমে এসেছে।’
অবৈধ স্থাপনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘১৯৮০ সালে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামাজিক বনায়ন রক্ষার দায়িত্বে থাকা পরিবারগুলোই এখন নিজেদের স্থায়ী মনে করে এসব স্থাপনা করছেন। অথচ তাদের অংশীদারিত্বের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে।’
রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেদি হাসান মানিক বলেন, ‘কোদালা বন বিটে বন প্রহরী বাড়াতে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। বন রক্ষায় এলাকাবাসীর সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে বন রক্ষা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন বাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হয় এবং এলাকাবাসীদের মাঝে বনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়।’আজাদী