ডেস্ক রির্পোট:- কাউকে গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানানোর বিধান যুক্ত করে ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) সংশোধন করেছে সরকার। এ ছাড়াও এখন থেকে যে পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার করতে যাবেন তার যথাযথ আইডেন্টিটি থাকতে হবে। নেমপ্লেট থাকতে হবে, আইডি কার্ড সঙ্গে থাকতে হবে এবং চাওয়া মাত্র এসব দেখাতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিআরপিসি সংশোধনের প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। পরে বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন থেকে যে পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার করতে যাবেন তার যথাযথ আইডেন্টিটি থাকতে হবে। নেমপ্লেট থাকতে হবে, আইডি কার্ড সঙ্গে থাকতে হবে এবং চাওয়া মাত্র এসব দেখাতে হবে। কাউকে গ্রেপ্তারের পর থানায় এনে পরিবারকে জানাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার বেশি সময় নেয়া যাবে না। গ্রেপ্তারকৃত অসুস্থ বোধ করলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কে গ্রেপ্তার করেছে, গ্রেপ্তারের পর পরিবারের কার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে সেসব তথ্য লিখিত থাকতে হবে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারদের তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরে থাকতে হবে। এবারের সংশোধনে ৫৪ ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, পূর্বের ৫৪ ধারায় ‘সন্দেহের অবকাশে’ গ্রেপ্তার করা হতো। এখন পুলিশের সামনে অপরাধ করেছেন এমন হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে। অথবা পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাকেও গ্রেপ্তার করতে পারবে। এবারের সংশোধনে সিআরপিসিতে অনলাইনে বেইল বন্ড দাখিল এবং ডিজিটাল সমনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, এ ছাড়া প্রত্যেকটি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে একটা মেমোরেন্ডাম অব অ্যারেস্ট রাখতে হবে, ডিটেইল তথ্য থাকতে হবে। কাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কী অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কোন আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কে গ্রেপ্তার করেছে বিস্তারিত সেখানে থাকতে হবে। তিনি বলেন, আগে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিভিন্ন এজেন্সি গ্রেপ্তার করতো। গ্রেপ্তার করে বলতো ‘আমরা জানি না’। র্যাব গ্রেপ্তার করে বলতো ‘পুলিশ জানে’, পুলিশ গ্রেপ্তার করে অন্য আরেক সংস্থার নাম বলতো। আমরা আইনে বলেছি-যেই সংস্থাই গ্রেপ্তার করুক তাদের সংশ্লিষ্ট অফিসে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির সব তথ্য সেখানে থাকতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাতে হবে। আমরা আরও বলেছি, নিয়মিতভাবে প্রত্যেক থানায়, জেলা সুপারের কার্যালয়ে, পুলিশ হেড কোয়ার্টারে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের তালিকা থাকবে। এগুলো সব বাধ্যতামূলক। তিনি আরও বলেন, বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আজ দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হবে। দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষিকাকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদানেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসময় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে হয়। অন্যদিকে কাউকে গ্রেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবার ও স্বজনদের জানাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।