খাগড়াছড়ি- ১৯ জুলাই ২০২৫ সকালে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গহীন অরণ্য থেকে মাদ্রাসা ছাত্র সোহেল অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মংসানু মারমা ও তার আরেক সহযোগি বাবু মারমাকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। সশস্ত্র সন্ত্রাসী মংসানু মারমা গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনেছে পুলিশ।
গত ৪ জুলাই রাতে উপজেলার ছদুরখীল এলাকায় নিজ বাড়ীতে ফেরার পথে মাদরাসা ছাত্র মো. সোহেল (১৪) নিখোঁজ হয় এবং সন্ত্রাসীরা অপহৃত সোহেলের মুক্তির জন্য ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
এ ঘটনায় গত ১১ জুলাই অপহৃতের পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে জড়িত সন্দেহ কসমকার্বারি পাড়ার সম্বু কুমার ত্রিপুরা (৩৬), গোরখানা এলাকার মো. মাঈন উদ্দিন (২১) ও মো. ইয়াছিন মিয়াকে (২৮) আটক করে পুলিশ। এর পর আরও ২ জন- আদি কুমার ত্রিপুরা ও মো. শফিউল্লাহকে আটক করে পুলিশ ।
১৯ জুলাই শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর হাতে আটক উপজেলার গহীন অরণ্যে থেকে মংসানু মারমা (৩৫) এবং আরেক অভিযানে বাবু মারমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাদরাসা ছাত্র সোহেল অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়।
মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মাদরাসা ছাত্র সোহেল অপহরণ পরবর্তী হত্যার ঘটনায় জড়িত এজাহারভুক্ত মূল পরিকল্পনাকারী ও আসামী এবং এই জনপদের আতংক সশস্ত্র সন্ত্রাসী মংসানু মারমাসহ ৭ জনকে যৌথবাহিনীর অভিযানে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। মংসানু মারমাকে আজ রোববার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণের কথা জানান ওসি।
মংসানু মারমার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানা যায়, ২০২১ সালে তৎকালীন ইউপিডিএফের (মূল) সদস্য ও পোস্ট কমান্ডার ছিলেন। ওই সময় মংসানু মারমাকে অস্ত্রসহ আটকের পর ২৩ মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসে এবং আবারও সশস্ত্র অবস্থায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। অবশেষে তার আটকের খবরে এলাকায় স্বস্তি নেমে এসেছে।
উল্লেখ্য, ৪ জুলাই ২০২৫ উপজেলার ঘোরখানা শাহানশাহ হক ভান্ডারী সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ও ছদুরখীল এলাকার আবদুল জলিলের পুত্র ১৪ বছরের শিশু মো. সোহেলকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। মুক্তিপণ না পেয়ে শিশুটিকে অপহরণকারীরা হত্যা করে। অপহরণের ১২ দিন পর ১৬ জুলাই উপজেলার বুদংপাড়া নামার পাড়ার গহীন অরণ্যের একটি ঝিরি থেকে অপহৃত সোহেল এর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে যৌথবাহিনী।
এর পর ১৮ জুলাই পর্যন্ত ৫ জনকে আটক করা হলেও ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় । অবশেষে ১৯ জুলাই ২০২৫ সকালে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গহীন অরণ্য থেকে সোহেল অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মংসানু মারমা ও তার আরেক সহযোগি বাবু মারমাকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী।