খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া এলাকায় ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে চার যুবককে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে সেনাবাহিনী। অভিযুক্ত আরও দুইজন খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা। ওসি বলেন, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পেয়েই পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলা নেয়। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানোর পাশাপাশি পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে খাগড়াছড়ি সদর থানায় ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। থানায় ছয়জনকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা। মামলার পরপরই ওই দিন দিবাগত রাত ৩টার দিকে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে সেনাবাহিনী।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের আরমান হোসেন (৩২), ইমন হোসেন (২৫), এনায়েত হোসেন (৩৫), সাদ্দাম হোসেন (৩২)। অপর অভিযুক্ত মো. সোহেল ইসলাম (২৩) ও মো. মুনির ইসলাম (২৯) পলাতক রয়েছেন। মামলার এজাহার ও ভিকটিমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন রথযাত্রার মেলা শেষে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত্রিযাপন করে ওই কিশোরী। রাতেই অভিযুক্ত ছয় যুবক ওই বাড়িতে ঢুকে কিশোরী এবং ঘরে থাকা এক যুবকের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তোলেন। এর পর ওই যুবককে বেঁধে রেখে কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
পরবর্তীতে ভয় ও লজ্জায় ঘটনাটি চেপে যায় ভুক্তভোগী কিশোরী। তবে সম্প্রতি ওই কিশোরী বিষপান করার পর তাকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর সে পরিবারকে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। এর পর বুধবার রাতে তার বাবা ছয় যুবকের নাম উল্লেখ করে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন জানান, সামাজিক লজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে মেয়েটি প্রথমে কিছু প্রকাশ করেনি। এর আগেই ওই ত্রিপুরা কিশোরী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানেও ধর্ষণের কথা বলেন। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকরা ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার কথা জানালে তারা সদর হাসপাতাল থেকে গোপনে বাড়িতে চলে আসে একটি স্থানীয় সূত্রে নিশ্চিত করে।
এদিকে, অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা বলছে ভিন্ন কথা, তাদের দাবি অভিযুক্তরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করেনি। মূলত ওই রাতে অন্য এক যুবকের সাথে বদ্ধ ঘরে আপত্তিকর কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় অভিযুক্তরা ওই কিশোরীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিলো। ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অথবা পরিবারের ভয়ে কিশোরীটি গণধর্ষণের নাটক সাজিয়েছে।
তাদের দাবী, একটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুকে ছয়জন যুবক মিলে গণধর্ষণ করলে তার পক্ষে সুস্থ থাকার কথা নয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা। অথচ মেয়েটি ১ সপ্তাহ পরে বিষপান করে অসুস্থ হওয়ার পর সুস্থতার জন্য তার পরিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরোফিন জুয়েল বলেন, ‘মামলা হওয়ার পরপরই আমরা চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ধর্ষণের শিকার কিশোরী এখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ তার জবানবন্দি নেওয়া হবে।
এদিকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তদের আটক করেছে। বিষয়টি যখন আইনী গতিতে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে তখন এই ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অস্থিরতা ও বাঙালি বিরোধী ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ।
তারা এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃণাত্মক প্রচারণা ও উষ্কানীমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা সদরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সেজন্য শুরুতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন সাধারণ পার্বত্যবাসী।