ডেস্ক রির্পোট:-চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এক মর্মান্তিক ঘটনা পুরো উপজেলায় শোকের ছায়া নামিয়েছে। সৌদি আরবে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত প্রবাসী মোহাম্মদ রুবেলের (২৭) মরদেহ দেশে আসার পথে, সেই মরদেহ গ্রহণ করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন রুবেলের বড় ভাই মোঃ বাবুল (৩৭) ও তাঁর ফুপাতো ভাই ওসমান গণি (৩৫)।
শনিবার (৫ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ভূজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান চৌধুরী শিপন। তিনি বলেন- এক ভাই নির্যাতনে মারা গেল, সে ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়ে অন্য ২ ভাইয়ের প্রাণ যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায়না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভূজপুর ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ রুবেল পরিবারের অভাব ঘোচাতে এবং স্বপ্ন পূরণের আশায় ২০২৪ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমান। কিন্তু তার প্রবাস জীবন ছিল নিদারুণ কষ্টের। মালিকের অনুমতি ছাড়া একটি বার্গার খাওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। গুরুতর আহত রুবেল মদিনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছরের ১৭ জুলাই মারা যান। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ এক বছরের আইনি লড়াই, যার পর অবশেষে তার নিথর দেহ দেশে ফিরছিল।
পরিবারের এই শোকের মধ্যেই আরও একটি দুঃসংবাদ নেমে আসে। সৌদি আরব থেকে ছোট ভাই রুবেলের কফিন ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রহণ করে তার বড় ভাই বাবুল এবং এক ফুপাতো ভাই ওসমান গণি। পথিমধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় তাদের বহনকারী এম্বুল্যান্সটি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রুবেলের বড় ভাই ও তাঁর ফুপাতো ভাই ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
নিহত ওসমান ভূজপুর ইউপির তালুকদার পাড়ার জয়নাল আবেদীনের ছেলে এবং নিহত বাবুল একই এলাকার ফুল মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় গুরুত্বর আহত হয়েছেন তাদের সাথে থাকা বশির সওদাগর।
নিহত ওসমান গণির ফুফাতো ভাই মাসুদ তালুকদার বলেন -সকালে রুবেলের লাশ রিসিভ করার পর তাদের সাথে কথা হয়েছে। বিকালে হঠাৎ শুনি তাদের এম্বুল্যান্সটি এক্সিডেন্ট করে সাথে থাকা আমার ফুফাতো ভাই ওসমান গণি এবং তার ফুফাতো ভাই বাবুল মারা গেছে। লাশ এখনো কুমিল্লার মিয়া বাজার থানায় আছে। স্থানীয় কয়েকজন সেখানে গিয়েছে লাশ বুঝে নেয়ার জন্য। আমার আর কিছু বলার ভাষা নাই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রাথমিক পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় মোটর সাইকেল চালক, প্রাইভেটকার যাত্রী এবং অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রীসহ মোট তিনজনের প্রাণহানি হয়েছে। তবে নিহতদের মধ্যে ওসমান গনি ও তার ফুপাতো ভাই বাবুল বলে নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মো: তারেকুল ইসলাম বলেন- শনিবার বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। এখনো লাশ চৌদ্দগ্রাম রয়েছে। এ মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে কান্নার শব্দে পরিবেশ ভারি হচ্ছে। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে ভূজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুবুল হককে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।