তিন রোগের মরণকামড়

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫
  • ৪২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রিপেৃাট:- তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথায় ভুগছিলেন রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন। টেস্ট করালে জানতে পারেন তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। সাজ্জাদ বলেন, ‘আমার ছেলে এবং স্ত্রী প্রথম জ্বরে আক্রান্ত হয়। ডেঙ্গু টেস্ট করালে দুজনের নেগেটিভ আসে। চার-পাঁচ দিন পর ওরা কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে আমার শরীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। টেস্ট করালে ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে বাসাতেই আছি। ওষুধ, স্যালাইন চলছে।’

সারা দেশে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছে মানুষ। টেস্ট করালে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া নয়তো করোনা শনাক্ত হচ্ছে। বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ সারা দেশে ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং কভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুন থেকে অক্টোবর সময়কালকে ভাইরাস জ্বরের জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হাসপাতাল ও বহির্বিভাগে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ঈশিতা বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুজ্বর, চিকুনগুনিয়া, কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই জ্বর, শরীর ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো উপসর্গ নিয়ে রোগী আসছে। এই তিন রোগের উপসর্গ খুব কাছাকাছি। কভিড-১৯ এবং চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থা খুব বেশি জটিল না হলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত জটিল রোগী পাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব রোগ প্রতিরোধে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বাসার চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে, পানি জমতে দেওয়া যাবে না। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি, স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। জ্বর কিংবা অন্য উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খুব সহজেই টেস্ট করে এই রোগগুলো শনাক্ত করা সম্ভব। দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা নিলে জটিলতা এবং ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।’

ভাইরাস জ্বর চিকুনগুনিয়া ফিরছে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা নিয়ে। ২০১৭ সালের পর দেশে আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৫২০ জন সন্দেহভাজন রোগীর মধ্যে ১৬১ জন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে মৃত্যুর হার কম হলেও, রোগের পরে গিটে ব্যথা, র‌্যাশ, দুর্বলতা এমন উপসর্গ দীর্ঘমেয়াদে রোগীর জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যে কারণে চিকিৎসকরা এটিকে সাধারণ ভাইরাস জ্বর ভেবে অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই ১৫-২০ জনের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। করোনার থাবায় ঝরছে প্রাণ। এ বছর করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫২৮ জন, মারা গেছেন ২০ জন। গতকালও করোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর ৭ হাজার ৫৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। জ্বর এলেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাচ্ছে মানুষ। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরা এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বর্ষাকাল আসতেই বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর আগে রাজধানীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও গত কয়েক বছর থেকে ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে রোগী বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যেই আতঙ্ক তৈরি করেছে বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতি। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ৯ হাজার ছাড়িয়েছে, প্রাণ ঝরেছে প্রায় ৪০ জনের। শুধু বরিশাল বিভাগেই আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজারের বেশি মানুষ। বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএমইউ) মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান বলেন, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেন-১, ডেন-২ এবং ডেন-৩ সেরোটাইপ সক্রিয় পাওয়া গেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মশা নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। আগে ঢাকাকেন্দ্রিক থাকলেও এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু।

ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যু : গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৯ জন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত পাওয়া এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মৃত দুজন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন মোট ৪০ জন। তারা হলেন, বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা আবদুল করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ইউসুফ খন্দকার (৭২)।বাংলাদেশ প্রতিদিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions