ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের নাম বদলে হচ্ছে জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট,আদিবাসী স্বীকৃতি দাবি করলেন সুপ্রদীপ চাকমা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ১২৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা ও জোরদার করার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠিত সাতটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউশনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার।

এসকল প্রতিষ্ঠানের নতুন নাম করা হবে জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট। সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২৩ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’ সংশোধনপূর্বক ‘নৃ-বৈচিত্র্য/জাতি বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ, ২০২৫ (প্রস্তাবিত)’ প্রণয়ন সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সভায় সাংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তাফা সারোয়ার ফারুকী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সু প্রদীপ চাকমা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র মতে, সভায় উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী বলেন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের সাথে তার কথা হয়েছে। তারা এই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এর নাম পরিবর্তন করতে চায়। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণের সাথে কথা বলে এ নাম জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এজন্য আইন সংশোধন করা হবে।

এছাড়াও উক্ত আইনের ৭( ঘ) তে উল্লিখিত ‘সরকার কর্তৃক মনোনীত শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির উন্নয়নের অবদান রাখিতে পারিবেন এমন উৎসাহী স্থানীয় ৬ জন প্রতিনিধি, তন্মধ্যে কমপক্ষে ৪ জন স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠী ভুক্ত হইবে’।

বলে যে ধারা রয়েছে তার পরিবর্তে এখানে সংশোধন করে ৪ এর পরিবর্তে ৬ জনই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর ফলে এসকল সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ২জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাইরের লোক রাখার যে সুযোগ ছিলো তা রহিত হয়ে গেল।

সূত্র আরো জানিয়েছে, সভায় উপস্থিত উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা তার বক্তব্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জোরালো দাবি জানিয়ে বলেন, ১৯৪৭ সালে পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি জনসংখ্যা ছিল ৩%। ১৯৭১ সালে ছিল ২২%, আর ১৯০০ সালে ছিল প্রায় ০% এর কাছাকাছি। আমরা আদিবাসী শব্দটি চাচ্ছি শুধু আমাদের আইডেন্টিফিকেশনের জন্য এছাড়া অন্য কোন কারণ নেই।

আমরা পাহাড়ি বাঙালি একসাথে থাকতে চাই। কারণ বাঙালিরা না থাকলে আমাদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা পাহাড়ীরা বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে চাই। বাঙ্গালীদের কারণে আমি সু প্রদীপ চাকমা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছি। তাই আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রফেসশনালসের পরিচালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শব্দের পরিবর্তে ‘নৃ-বৈচিত্র্য’ বা ‘জাতি বৈচিত্র্য’ শব্দচয়ন একটি আপাতদৃষ্টিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ হলেও, এর মাধ্যমে কিছু গোষ্ঠী ভবিষ্যতে ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য দাবি তোলার কৌশলগত ভিত্তি তৈরি করতে পারে—যা বাংলাদেশের সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদের বিরোধিতা করে।

তিনি বলেন, এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে সাংগঠনিক আধিপত্যের আশঙ্কা রয়েছে। সংশোধিত আইনের ৭(ঘ) ধারায় ৬ জনই স্থানীয় প্রতিনিধি ‘নৃ-গোষ্ঠী’ভুক্ত রাখার প্রস্তাব একটি একচেটিয়া গোষ্ঠী প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবে প্রতিভাত হতে পারে, যা পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্বকে হ্রাস করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, উপদেষ্টা সু প্রদীপ চাকমার বক্তব্যে রাষ্ট্রীয় সহাবস্থান ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব স্বীকার করা হলেও, ‘আইডেন্টিফিকেশন’-এর নামে ‘আদিবাসী’ শব্দের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ভবিষ্যতে জাতিগত রাজনীতি উসকে দিতে পারে। এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তার পাশাপাশি দ্বৈত উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়াও তিনি সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে সংবিধান বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions