ডেস্ক রির্পোট:- আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে ১৪৭টি রাজনৈতিক দল। এই আবেদন জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এদিনই ৭০-এর বেশি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আবেদন করেছে। এদিকে এবারের নির্বাচনকে
সামনে রেখে গত ১০ই মার্চ আগ্রহী দলগুলোর কাছ থেকে নিবন্ধন আবেদন আহ্বান করা হয়। ২০শে এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করে ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দল। পরবর্তীতে এনসিপিসহ ৪৬টি দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময়সীমা দুই মাস বাড়িয়ে ২২শে জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। বর্ধিত এই সময়ে আরও ৮২টি নিবন্ধনের আবেদন পড়েছে।

বিকালে নিবন্ধনের আবেদন করে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র নেতাদের নিয়ে গঠিত আলোচিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। প্রয়োজনীয় দলিলপত্রসহ এনসিপি’র আবেদন জমা দেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এ সময় দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন তার সঙ্গে ছিলেন। আবেদনপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আখতার হোসেন বলেন, আমরা ইসি কর্মকর্তাদের কাছে আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করে-এমন সব কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। আমরা এনসিপি’র দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা প্রতীক চেয়েছি। তিনটি প্রতীকের কথা আবেদনে বলা হলেও ইসি শাপলা প্রতীককে এনসিপি’র প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেবে বলে প্রত্যাশা রাখেন তিনি। এ সময় নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী জানান, শাপলা ছাড়াও কলম ও মোবাইল প্রতীক হিসেবে চেয়েছে এনসিপি। এরমধ্যে শাপলাই বরাদ্দ পাবেন বলে তারা আশাবাদী। তিনি বলেন, এনসিপি নিবন্ধন পাবে এবং শাপলা প্রতীকে জয় করা হবে আগামী নির্বাচনে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ৪০০ আসনের মধ্যে ৩০০ আসনে জয়ী হয়ে এনসিপি সরকার গঠন করতে পারবে বলে তিনি দাবি করেন। এ ছাড়া বর্তমান ইসি’র পুনর্গঠনের দাবি আবারো তুলে ধরে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আমরা এখনো দাবি করছি বর্তমান ইসি’র পুনর্গঠন করতে হবে। এই ইসি পুনর্গঠন হতে হবে এবং পুনর্গঠন হবেই। আমরা ‘বি’ অপশনে যাচ্ছি না। আর কোনো বিকল্প নেই। পরবর্তীতে দলের নিবন্ধন আবেদনের কাগজপত্র ট্রাকে করে নিয়ে আসে দলটি। তখন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ইসিতে আসেন। পরে দলটির নেতারা প্রায় ঘণ্টাব্যাপী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যমে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশাবাদী দ্রুত এনসিপি নিবন্ধন পাবে। আমরা এটাও আশা করছি যে, জনগণের মার্কা হিসেবে, গ্রাম-বাংলার প্রতীক হিসেবে শাপলা এনসিপি পাবে। সিইসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। প্রবাসীদের ভোটাধিকার যেকোনো মূল্যে রক্ষা করার বিষয়ে সিইসিকে বলেছি। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। শাপলা প্রতীকের বিষয়ে আইনগত কোনো সমস্যা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জাতীয় ফল কাঁঠাল একটি দলের প্রতীক রয়েছে। জাতীয় প্রতীকের বিষয়টিও সামনে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় প্রতীক কেবল শাপলা নয়। শাপলা, ধানের শীষ, তারকা-এগুলো নিয়েই কিন্তু জাতীয় প্রতীক। এগুলোও কিন্তু দলীয় প্রতীক হিসেবে রয়েছে। সুতরাং শাপলা প্রতীকের বিষয়ে কোনো আইনগত সমস্যা আমরা দেখছি না।

এর আগে হাতি প্রতীকে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দল জনতার পার্টি বাংলাদেশ (জেপিবি)। আবেদন জমা দিয়ে দলটির মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। নিবন্ধন বিধিমালার যে শর্ত আছে সেগুলো পালন করা খুব কষ্টকর। নির্বাচন কমিশন কিছু কিছু বিধিমালা সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে। এ প্রস্তাবগুলো কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তারপরও পুরনো বিধিমালা অনুযায়ী আমরা আবেদন জমা দিয়েছি এবং আমরা আশা করি আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাবো। অন্যদিকে চাবি প্রতীকে নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছে জনতার দল। দলটির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম কামাল ও সদস্য সচিব আজম খান আবেদন জমা দেন।

ওদিকে নিবন্ধন আবেদন শেষে বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টির আহ্বায়ক মো. রফিকুল আমীন বলেন, আমরা সমস্ত শর্ত মেনে নিবন্ধনের আবেদন করেছি। বর্তমান সরকার রাজনৈতিক বান্ধব এবং আমাদের পছন্দের। আমরা এই সরকারের মাধ্যমে ইসি’র কাছে আবেদন করবো, গণতন্ত্র চর্চা করার জন্য আমাদের দলকে নিবন্ধন দিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতির একটি সুষ্ঠু ধারা চালু করার জন্য সহযোগিতা করবেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতীক হিসেবে আনারস, কলম এবং ঘণ্টা চেয়েছি।

এদিকে গতকাল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে এমন আরও দলের মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা), বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ সমতা পার্টি, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি), বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা পার্টি, বাংলাদেশ গণবিপ্লবী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ), বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (বিসিপি), জাতীয় ন্যায়বিচার পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিডিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি, বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাকশন পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র জনতা পার্টি, বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি, গণদল, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, জনতার বাংলাদেশ