ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠক : রাজনীতির টার্নিংপয়েন্ট

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫
  • ৪৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- উত্তম কুমারের একটি ছবির নাম ভ্রান্তিবিলাস। উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত নাটক ‘কমেডি অফ এররস’ অবলম্বনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ভ্রান্তিবিলাস সিনেমার গল্প এমন; ‘এক বাঙালি বণিক ব্যবসার জন্য চাকরকে নিয়ে নতুন শহরে যান। বণিক আর চাকরের চেহারার সঙ্গে স্থানীয় দু’জনের চেহারার মিল থাকায় তাদের স্থানীয় ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তারা ওই বিদেশি বণিককে ‘এলাকার লোক’ ভ্রান্তিবিলাসে পড়েন। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ভারতে পলায়ন এবং ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর উপদেষ্টাদের অনেকেই ভ্রান্তি বিলাসে মেতে উঠেছেন। এনজিও কর্মকর্তা, পশ্চিমা দেশের তাঁবেদার, বিদেশি নাগরিক যাদের বেশির ভাগের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরোধী আন্দোলন ও কর্মকান্ডের সামান্যতম সম্পর্ক ছিল না; তারা পদপদবি পাওয়ায় ‘মুই কি হনুরে’ হয়ে ভ্রান্তিবিলাসে পড়ে যান। রাজনীতির সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক ছিল না অথচ চেয়ারে বসে দেশের জাঁদরেল নেতাদের চেয়ে নিজেদের বড় রাজনীতিকের ভাব ধরেছেন। মেধাবী-প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্বদের বদলে তাদের পদপদবিতে বসানোয় তারা ‘আমিই রাজনীতি বেশি বুঝি’ মানসিকতায় দলগুলোর উপর ছড়ি ঘুড়াতে শুরু করেন। একই অবস্থা সৃষ্টি হয় ক্যাডারভিক্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াত ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জন্ম নেয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কিছু নেতার। ডিবি হারুনের ভাতের হোটেলের সমঝোতার দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রদর্শিত হওয়ার পরও ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমে আসায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন তাদের উজ্জীবিত করেছে। কিছু উপদেষ্টা-জামায়াত-এনসিপির নেতারা দেশের রাজনীতিতে জনসমর্থন ও সাংগঠনিক শক্তিতে নিজেদের বিএনপির সমকক্ষ মনে করছেন। তারা প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করে বিএনপিকে কোণঠাসা করার চেষ্টায় মেতে উঠেছেন। হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এদের রাজনীতির ভ্রান্তিবিলাস চক্রান্তের ক‚টাভাস ডালপালা ছড়াতে থাকে। সংস্কার, নির্বাচনের টাইমফ্রেম এমনকি জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচন আগেপরে নিয়ে খেলতে শুরু করেন। কিন্তু ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ এবং এপ্রিলে নির্বাচন হবে ঘোষণার পর বিএনপির তীব্র প্রতিক্রিয়া ওই ভ্রান্তিবিলাস চূর্ণবিচুর্ণ করে দেয়। তারা বুঝতে পারেন সাংগঠনিক ও জনসমর্থনের বিবেচনায় বিএনপি মহাসাগর হলে তারা কুয়ো এবং বদ্ধ জলাশয়ের সমতুল্য। বিএনপিকে উপেক্ষা টিকে থাকা কোনো কিছুই অসম্ভব। ফলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামত নিয়েই নির্বাচন ইস্যুতে কর্মপন্থা চূড়ান্ত করতে হবে। লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে সেখানে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। ‘নির্বাচন টাইমফ্রেম’ ইস্যুতে তারেক রহমানের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক রাজনৈতিক মহাসংকট থেকে পরিত্রাণে ‘ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার’ সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক হবে রাজনীতির নতুন ‘ডাইমেনশন’।

ঢাকা ও লন্ডনের কুটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির দিক থেকেও সাক্ষাৎ ও বৈঠক নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়া হয়েছে। ফলে বৈঠক হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে সরকারের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হবে। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য সমঝোতা বা কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে লন্ডনে তারেক রহমানের বৈঠক হবে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় বইছে। বৈঠকে কোন কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে, নির্বাচনের সময়সমী পুনঃবিবেচনা করা হবে কিনা তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ হাসিনা যখন ড. ইউনূসকে টার্গেট করে তখন বিএনপি তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। শুধু তাই নয় ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক একান্তে হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। একাধিক বিশ্লেষক ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আশপাশে ‘ভ্রান্তিবিলাসে’ থাকা লোকজন রয়েছে। বৈঠকে আলোচনা হয় এক বিষয়ে তারা সংবাদ সম্মেলন করে অন্য বিষয়ে কথা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান। ফলে হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ পদে বসা ভ্রান্তিবিলাসী কর্মকর্তাদের দূরে রেখে ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠক হলে তা বেশি ফলপ্রসূ হবে।

যুক্তরাজ্য সফররত প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউন‚সের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৩ জুন শুক্রবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে সংকটগুলো রয়েছে, সেগুলোয় এ বৈঠক ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বর্তমানে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বা অবস্থান, তাতে এ বৈঠক একটা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। এটার গুরুত্ব অনেক বেশি।’ অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি এ সময়ের বড় ‘পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ বৈঠকে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন তৈরি হতে পারে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।’ দেশের রাজনৈতিক দল, সংগঠন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীসহ সবার প্রতি আহŸান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জাতিকে বিভক্ত করবেন না। তাহলে যারা বাইরের শক্তি, যারা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করে, তারা সুযোগ পাবে।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন,‘এপ্রিলে নির্বাচনের আয়োজন দুরভিসন্ধিমূলক। দেশ ও জাতির কল্যাণে এপ্রিল (চৈত্র মাস) নির্বাচনের সিদ্ধান্ত সরকার পুনর্বিবেচনা না করলে রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ নেমে আসবে। আর যার দ্বারা উপকৃত হবে একমাত্র আ.লীগ। সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণ মধ্যে যতো দূরত্ব বাড়বে, তার সমস্ত বেনিফিট পাবে ফ্যাসিস্ট আ.লীগ। এপ্রিল মাস প্রচন্ড গরমের মাস। গরমের কারণে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেয়া ও প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা ও গণসংযোগ কঠিন হবে। এপ্রিলে ভোট করার কি ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য আছে? তারা কি এমনকিছু দেখাতে চায় যে, ভোটারশ‚ন্য নির্বাচন?’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, নির্বাচন যাতে আরো পেছানো হয় সে পরিকল্পনা থেকে এপ্রিলে নির্বাচনের তারিখ দেয়া হয়েছে। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এনসিপি ও জামায়াত। তবে এপ্রিলে নির্বাচনের আগে রমজান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এনসিপি নতুন করে নির্বাচন পেছানোর দাবি তুলে আন্দোলন করবে এবং জামায়াত তাদের সঙ্গী হবে। নির্বাচন পেছানোর জন্যই মূলত এ সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার অনুষ্ঠেয় বৈঠক সফল হবে এমন প্রত্যাশা করছি।

দেশের মানুষ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। গত ১৫ বছরে দেশে প্রায় ৪ কোটি নতুন ভোটার হয়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। মানুষ চায় নির্বাচনে ভোট দিতে। জনগণের এই ভোট দেয়ার চেতনাকে ধারণ করেই প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করেছে। ভোট না হওয়া পর্যন্ত এই ট্রেন থামবে না’। পরে তিনি বহুবার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলো যতদিন চাইবে ক্ষমতায় থাকবে। স্বল্প সংস্কারে ডিসেম্বর ও বড় সংস্কারে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু ষড়ঋতুর দেশে নির্বাচনের ভোটার সমাগমের লক্ষ্যে দিনক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে মানুষ উৎসব হিসেবে নেয়, ফলে শীতকালে তথা নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সময়ে নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। এ ছাড়া এপ্রিলের পর ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ¡াস, প্রাকৃতি দুর্যোগ, এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা রয়েছে। এ বিবেচনায় বিএনপিসহ অর্ধশত দল ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করে। কিন্তু সরকার সমর্থিত হিসেবে পরিচিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির সাংগঠনিক ভাবে বিস্তার ঘটাতে আরো সময়ের প্রয়োজন। তারা সংস্কার ও জুলাই ঘোষণার অজুহাতে নির্বাচন আরো পেছানোর দাবি করেন। এ জন্য ‘জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ বছর ক্ষমতায় চায়’ এমন প্রচারণা চালানো হয়। তাদের সুরে সুর মেলায় ৫ আগস্টে হাসিনা পালানোর পর নিষিদ্ধতা উঠে যাওয়া জামায়াত। হাসিনা রেজিমে দলটি কার্যত সাংগঠনিক ভাবে নিষ্ক্রিয়ই ছিল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে ১৯৯৬ সালে একক নির্বাচন করে জামায়াত মাত্র ৩টি আসনে বিজয়ী হয়। সাংগঠনিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট গঠনের মাধ্যমে বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়। এ সময় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক গভীর হয়। আওয়ামী লীগ শাসনামলে জামায়াতের সব অফিস বন্ধ করে দেয়া হয় এবং দলটি ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংক-বিমা দখল করা হয়। তখন জামায়াতকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেয় বিএনপি। এ জন্য বিএনপিকে চরমমূল্য দিতে হয়েছে। ১৫ বছর আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সব সময় বিএনপিকে ঘায়েল করতে ‘বিএনপি-জামায়াত’ শব্দটি ব্যবহার করতো। এভাবে বিএনপিকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসেবে চিহ্নিতের অপচেষ্টা চলে। বিএনপি ও জামায়াত ২২ বছরের রাজনৈতিক মিত্রের জোট ভেঙ্গে যায় ২০২২ সালে। বিএনপির প্রতি এ নিয়ে জামায়াত ছিল হতাশ ও ক্ষুব্ধ। হাসিনা পালানোয় নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে উঠার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠে জামায়াত। এ জন্য দলটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন, হিন্দুদের জামায়াতে অন্তর্ভুক্তিকরণ, দলটির আমিরের ‘ফ্যাসিস্ট শব্দ বার বার বলতে ভাল লাগে না’ ‘আমরা ওদের (আওয়ামী লীগ) ক্ষমা করে দিলাম’ ‘জামায়াত ক্ষমতায় গেলে মেয়েরা যে কোনো পোশাক পরে রাস্তায় বের হতে পারবে’ ইত্যাদি বক্তব্য দিয়ে দিল্লির অনুকম্পা পাওয়ার কৌশল নেয়। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু কর্মকান্ডে এনসিপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। এ প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে ঠেকাতে ভবিষ্যতে জামায়াত-এনসিপি নির্বাচনী জোট গঠনের প্রত্যাশা থেকে দু’টি দল বিএনপির বিপক্ষে রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির চেষ্টা করে। এতে এনসিপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা অন্তর্বর্তী সরকার জামায়াতের প্রতি অতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠে। ফলে প্রতিটি ইস্যুতে বিএনপি যে বক্তব্য দেয় তার বিপরীত বক্তব্য হাজির করে জামায়াত ও এনসিপি।

জামায়াতকে সুবিধা দিতে নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে গতকাল সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, কালক্ষেপণ না করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো অনির্বাচিত সরকারের ওপর ভর করে তাদের স্বার্থ রক্ষায় নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের স্বার্থবিরোধী সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।

এর মধ্যে জাপান সফরে গিয়ে বিএনপির প্রতি ইংগিত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘একটি দল সংস্কারের বদলে ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়’। এ নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অনুসন্ধান করে দেখা যায় জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টিসহ দু’চারটি ইসলামী দল ছাড়া বিএনপি, সিপিবি, জাসদ-বাদস,এলডিপি, জাগপাসহ অর্ধশত দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেন। সংলাপে বিএনপিসহ ২০টি নিবন্ধিত দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। আর জামায়াত এপ্রিলে এবং এনসিপি সংস্কার ও জুলাই ঘোষণার পর নির্বাচন চায়। এ নিয়ে যখন বিতর্ক চলছে; তখন ঈদের আগের রাতে ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। জামায়াত এ ঘোষণাকে স্বাগত জানায় এবং এনসিপি একটু ঘুরিয়ে স্বাগত জানায়। কিন্তু বিএনপি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় ডিসেম্বরই হচ্ছে নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। এপ্রিলের আগে রমজান মাস নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না; অতঃপর এসএসসি এবং পরে এইচএসসি পরীক্ষা হবে। তাছাড়া প্রাকৃতির দুর্যোগ রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবিতে অটল থেকে এক মাস পর ডিসেম্বরে নির্বাচন আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামার ইংগিত দেয়।

এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা ইসলাম বিদ্বেষী চেতনা থেকে দেয়া হয়েছে দাবি করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুন নূর তুষার বলেন, রজমানের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা এটা কেমন কথা! একদিকে সারাদিন রোজা রেখে মানুষ তারাবীর নামাজ পড়বেন অন্যদিকে প্রার্থীরা মাইকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন। এপ্রিলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা জামায়াতের ডিজাইন হলেও এটা ইসলাম বিদ্বেষী চেতনা। ড. ইউনূস এনসিপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং জামায়াতকে প্রশ্রয় দিয়ে জনগণের প্রত্যাশার বাইরে চলে যাচ্ছে। সাক্ষাতের আবেদন করে বিএনপির মতো দল চারদিনেও দেখা করতে না পারলেও এনসিপি নেতা এক ঘণ্টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মানুষ মনে করছে সরকার এনসিপির হয়ে কাজ করছে এবং জামায়াতের কথামতো নির্বাচনের তারিখ দিয়েছে। এখন শুনছি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ন্নে তারেক রহমানের বৈঠকের কর্মসূচি রয়েছে। এটা পজেটিভ। কি নিয়ে আলোচনা হয় সেটা হয় যৌথ ভাবে নতুবা পৃথক পৃথক ভাবে প্রকাশ করতে হবে। কারণ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব নিত্য মিথ্যা বয়ান দেন। আমি মনে করি ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক রাজনৈতিক সংকট সুরাহার পথ দেখাবে।ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions