ডেস্ক রিপোট:- নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায় ও ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় বেশ কিছু পণ্যের আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট কমানো হয়েছে। ফলে বাজারে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। গতকাল রাষ্ট্রীয় সমপ্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা। প্রস্তাবিত বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে কমতে পারে গ্যাসের দাম। বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। এর বাইরে এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়। অন্যদিকে ক্রুড ফুয়েল অয়েল বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে।
এ ছাড়া টায়ার, টিউব, ব্রেক সু, ব্রেক প্যাড, মার্বেল ও গ্রানাইট উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব এসেছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ওদিকে চামড়া শিল্পের জন্য কিছু রাসায়নিক উপাদানে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এ শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণের মূল্য কিছুটা কমতে পারে। আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে-ধান, গম, আলু, পিয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডাল, ভুট্টা, মোটা আটা, আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্য তেল, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, খেজুর, ক্যাসিয়া পাতা, কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফল। সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে ইন্টারনেট সেবা থেকে উৎসে কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটে কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছে। কাঠার পরিবর্তে শতাংশে নিবন্ধন ফি ও কর নির্ধারণ করা হচ্ছে। প্রকৃত বিক্রয়মূল্যে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের লক্ষ্যে জমি হস্তান্তর থেকে উৎসে কর সংগ্রহে বিদ্যমান মূলধনি মুনাফার কর হার কমিয়ে এলাকাভেদে বিদ্যমান হার ৮, ৬ ও ৪ শতাংশের স্থলে যথাক্রমে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ভূমি নিবন্ধন ব্যয় কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবেশবান্ধব রিসাইক্লিং শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের হার ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ ও বলপয়েন্ট পেনের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ফলে দেশে উৎপাদিত এসব পণ্য কম দামে মিলতে পারে। এদিকে ২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এতে কম দামে কম্পিউটার মনিটর কিনতে পারবেন ক্রেতারা। সকল ধরনের আইসক্রিমের ওপর সম্পূরক শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ই-বাইকের স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত ভ্যাট ২০৩০ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে ই-বাইক। অন্যদিকে পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক প্রতি টন চার হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে চার হাজার টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক হিসেবে সয়াবিন মিল কিংবা কাগজশিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামাল বা উপকরণের ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব আছে প্রস্তাবিত বাজেটে। পাশাপাশি থাকছে নিউট্রালাইজড সয়াবিন তেলের শুল্ক রেয়াতের প্রস্তাব। অন্যদিকে নির্মাণশিল্পের উপকরণ স্থানীয় শিরীষ কাগজ শিল্পের প্রয়োজনীয় ফেনোলিক রেজিন ও স্যান্ডপেপার জাতীয় কাঁচামালের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে এবারের বাজেটে। নিউজপ্রিন্ট আমদানির কাস্টমস শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বাজেটে। ফলে কম দামে মিলতে পারে সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্ট। ব্যাট তৈরির কাঠ আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাট তৈরির উইলো কাঠ আমদানির শুল্কহার কমিয়ে ২৬ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সিকিউরিটি সফটওয়্যারে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মাটি ও পাতার তৈরি তৈজসপত্রের ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, বর্তমানে এসব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। এটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব রয়েছে এবারের বাজেটে। ওদিকে নন-অ্যালকোহলিক জুস আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে। ফলে বিদেশি জুস মিলতে পারে তুলনামূলক কম দামে। পিভিসি পাইপের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকরণের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। একই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কপার ওয়্যারেও। এই পণ্যের উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে এগুলোর দাম কমতে পারে।মানবজমিন