প্রাণের ভয়ে হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তটা কতটা কঠিন ছিল তার জন্য, কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার ছয় মাস পর বললেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে।

অসদাচরণ ও চাকরির শর্ত ভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের পদ থেকে চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করার পর কেটে গেছে ছয় মাস। এতদিন পর শ্রীলঙ্কান এই কোচ বললেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও অস্থিরতার সময় এখান থেকে চলে যাওয়ার মুহূর্তটা খুবই কঠিন ছিল তার জন্য। ‘নিরাপত্তার অভাবে এমনকি প্রাণ হারানোর ভয়ও’ পেয়ে বসেছিল তাকে!

গত অক্টোবরের মাঝামাঝি কোচের দায়িত্ব থেকে হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে তাকে ‘কারণ দর্শানোর’ নোটিশ দেওয়ার কথাও জানান তিনি। পরদিন বিসিবিকে জবাব পাঠিয়ে দেন হাথুরুসিংহে। সেই জবাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য ও অসন্তোষজক’ জানিয়ে পরের দিন তার চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করে বিসিবি।

বিসিবির পক্ষ থেকে দুটি অভিযোগ ছিল হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে- ‘মিসকন্ডাক্ট উইথ আ প্লেয়ার’ ও ‘মিসকন্ডাক্ট অ্যাজ আ এমপ্লয়ি।’

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তখন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল দেশ। রোববার কোড স্পোর্টসের সঙ্গে আলাপে হাথুরুসিংহে তুলে ধরলেন, ঢাকা ছাড়ার আগের সময়টা কতটা কঠিন ছিল তার জন্য।

“আমার প্রতি বাংলাদেশের সিইওর (বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরি) শেষ কথা ছিল যে, আমার চলে যাওয়া উচিত। ‘বোর্ডের কাউকে বলার দরকার নেই, আপনার কি যাওয়ার টিকেট আছে?’ এটা ছিল আমার জন্য সতর্কতা সংকেত। তখনই আমি কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সাধারণত ওই দেশে ভ্রমণের সময় আমার জন্য একজন ড্রাইভার ও একজন বন্দুকধারী থাকত। তিনি বললেন, ‘আপনি কি আজ আপনার বন্দুকধারী ও ড্রাইভারকে পেয়েছেন?’ আমি বললাম, না, আমার শুধু ড্রাইভার ছিল।”

টাকা তুলতে ব্যাংকে যাওয়ার পর টিভিতে একটি খবর দেখার পর, ব্যাংক ম্যানেজারের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন হাথুরুসিংহে।

“আমি সরাসরি ব্যাংকে গিয়েছিলাম, দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য টাকা তোলার চেষ্টা করছিলাম। আমি যখন ব্যাংকে ছিলাম, তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছিল; ‘চান্দিকাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি একজন খেলোয়াড়কে লাঞ্ছিত করেছেন।’ যখন এই খবর এলো, তখন ব্যাংক ম্যানেজার বললেন, ‘কোচ, আমাকে আপনার সঙ্গে যেতে হবে। লোকেরা আপনাকে রাস্তায় দেখলে সেটা আপনার জন্য নিরাপদ হবে না।”

“তখন আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, কারণ আমাকে দেশ থেকে চলে যেতে হবে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মধ্যরাতের ফ্লাইটের জন্য এক বন্ধু আমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গেল এবং আমি একটি টুপি ও একটি হুডি পরে গেলাম, সেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই।”

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গ্রেপ্তার হচ্ছিলেন অনেক এমপি-মন্ত্রী। গ্রেপ্তার-আতঙ্ক পেয়ে বসেছিল হাথুরুসিংহেকেও!

“দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য তারা আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করতে পারত। একটা ঘটনা ঘটেছিল যে, আগের সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন, রানওয়েতে বিমানটি থামিয়ে তাকে বের করে আনা হয়। এসব আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তারপর প্রবেশপথে এক্স-রে মেশিনে, বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা আমাকে বললেন; ‘আমি দুঃখিত কোচ, আমি খুব দুঃখিত যে, আপনি চলে যাচ্ছেন’ (আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন)। আমি আমার প্রাণ নিয়ে ভয়ে ছিলাম এবং তিনি বলেছিলেন যে, আমি তাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছি।”

ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলার সময় বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ উঠেছিল হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপ ব্যর্থতা নিয়ে গঠিন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও এই ঘটনা উঠে এসেছিল বলে জানা গিয়েছিল। যদিও আগের বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান তা এড়িয়ে গেছেন বা অস্বীকার করেছেন বারবার। তবে পরে ফারুক আহমেদ জানান, তদন্ত প্রতিবেদনেই ঘটনার উল্লেখ আছে। এছাড়া তিনি নিজেও ওই ক্রিকেটার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানান বিসিবি প্রধান।

হাথুরুসিংহের দাবি, এ ব্যাপারে তার বক্তব্য কখনও জানতে চাওয়া হয়নি বিসিবির পক্ষ থেকে। নাসুম এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান বরাবরই।

নাসুমকে চড় মারার অভিযোগ আবারও অস্বীকার করে হাথুরুসিংহে বললেন, মাঠে ব্যাটসম্যানদের হ্যান্ডগ্লাভস পাঠানোর জন্য ডাগআউটে পেছনে বসে এই স্পিনারের পিঠে টোকা দিয়েছিলেন তিনি।

বিসিবি তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন দুই দফায় বাংলাদেশের দায়িত্বে থাকা এই কোচ।

“এটাই (ক্রিকেট) সবকিছু, কারণ এটাই আমার ক্যারিয়ার। তারা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অভিযোগ এনে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে।”

“আমি কখনও কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঝগড়া করিনি। খেলোয়াড়দের সঙ্গে আবেগ দেখাই না আমি। হয়তো হতাশা থেকে আমি একটি ডাস্টবিনে লাথি দিয়েছি, যে কোনো কোচের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। কিন্তু যা হয়েছে, তার থেকে এটা একেবারেই আলাদা। এটা আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমি জানি না অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কত সুযোগ আমি হারিয়েছি। তারা কেবল আমার চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা করেছে। নতুন সভাপতির পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছিল এটা।”

বাংলাদেশে হাথুরুসিংহের ওই সময়ের সহকারী কোচ ও সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার নিক পোথাস কোড স্পোর্টসকে বলেছেন, যে অভিযোগ করা হয়েছে, তেমন কিছুই আসলে ঘটেনি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions