রাঙ্গামাটি;- পাহাড়ি তঞ্চঙ্গ্যা মেয়েকে ধারাবাহিক ধর্ষণ পরবর্তীতে গর্ভপাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নিকোলাস চাকমা নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে রাঙ্গামাটির কোতয়ালী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত নিকোলাস চাকমা রাঙ্গামাটি শহরের দক্ষিণ কালিন্দিপুর এলাকার মিলন বিকাশ চাকমার ছেলে। তার বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় গত ১০/০১/২০২৫ ইং তারিখে নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী তঞ্চঙ্গ্যা নারী। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাঙ্গামাটির কোতয়ালী থানা পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন জানিয়েছেন, আমরা আদালতের নির্দেশনায় ভিকটিম নারীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করার পর আসামিকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছিলাম। অবশেষে প্রযুক্তির সহযোগিতায় এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা খাগড়াছড়ি থেকে আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। শনিবার আদালতের মাধ্যমে আসামিকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিকোলাস চাকমা রাঙ্গামাটি শহরে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে ভিকটিমের গর্ভের প্রসবকৃত বাচ্চাকে চুরি করে নিয়ে মহালছড়িতে অন্যজনের কাছে দত্তক দেওয়ার মতো গুরুত্বর অভিযোগ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নিকোলাস চাকমা রাঙ্গামাটি থেকে পালিয়ে খাগড়াছড়িতে গিয়ে আরেকটি বিয়ে করে সেখানেই সংসার করছিল বলে সংশ্লিষ্ট্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রাঙ্গামাটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মাকসুদা হক এই মামলার বিষয়ে জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ছিলো। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলীর কুশল্যাঘোনার জনৈক তঞ্চঙ্গ্যা ব্যক্তির মেয়ে রাঙ্গামাটি শহরের চম্পকনগর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশোনা করতো। ভিকটিমের সাথে ২০২১ সালে পরিচয়ের পর বন্ধুত্ব পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে আসামি নিকোলাস। সম্পর্কের এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভনে গত ১২/০৯/২০২৩ ইং তারিখে আসামি মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে।
তারই ধারাবাহিকতায় একাধিকবার সম্পর্কের ফলে মেয়েটি গর্ভবর্তী হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ের মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে ৩০/১১/২০২৩ইং তারিখে ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে মেয়েটি গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বিয়ের আশ্বাসে মেয়েটির সাথে মেলামেশা অব্যাহত রাখে নিকোলাস চাকমা। গত ২৮/০৬/২০২৪ ইং তারিখে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভিকটিমের একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট হয়।
এই ঘটনায় নিকোলাস চাকমা তার পিতা-মাতা মেনে নিবেনা জানিয়ে উক্ত ভিকটিমকে নবজাতকসহ নিজ বাসায় না নিয়ে তার পরিচিত বড় ভাই প্রণব চাকমার কালিন্দিপুরের ভাড়া বাসায় নিয়ে উঠে। এরপর ২/৭/২০২৪ ইং তারিখে আসামি নিকোলাস চাকমা ভিকটিমের সদ্যজাত সন্তানকে জোড় করে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে মহালছড়ির জনৈক রিপন চাকমা ও পুর্ণিমা চাকমা দম্পতির কাছে ভিকটিমের পুত্র সন্তানকে দত্তক দিয়ে দেয়।
এই ঘটনার পর থেকে আসামি নিকোলাস চাকমা ভিকটিমকে ফেলে রেখে উধাও হয়ে যায়। পরবর্তীতে অসহায় তঞ্চঙ্গ্যা মেয়েটি বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ন্যায় বিচার পায়নি।
অবশেষে আদালতে এই বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হলে চলতি বছরের ০৭/০১/২০২৫ ইং তারিখে রাঙ্গামাটির নারী শিশু নির্যাতর দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে অভিযোগ দাখিল করলে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বিষয়টি আমলে নিয়ে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানাকে এই ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা গ্রহণের আদেশ দেন।
রাঙ্গামাটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মাকসুদা হক বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তারে ভিকটিমের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম হয়েছে এবং পরবর্তীতে আমরা আদালতের মাধ্যমে ভিকটিমের পুত্র সন্তানকে উদ্ধারের চেষ্ঠা চালাব। এই ঘটনায় ভিকটিম নারীর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করবেন বলেও জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট মাকসুদা হক।