বিএনপিতে হচ্ছেন তিন মহাসচিব

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫
  • ২৯ দেখা হয়েছে

♦ সাংগঠনিক, আন্তর্জাতিক ও প্রশাসনিক বিষয়ক তিনটি মহাসচিব পদ তৈরি হচ্ছে ♦ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনতন্ত্রে যুক্ত হতে পারে কো-চেয়ারম্যান পদ

ডেস্ক রির্পোট:- দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিতে মহাসচিব হবেন তিনজন। একজন হবেন সাংগঠনিক বিষয়ক মহাসচিব, আরেকজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক মহাসচিব এবং অন্যজন দায়িত্ব পালন করবেন প্রশাসনিক বিষয়ক মহাসচিব হিসেবে। দলের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে কিংবা চেয়ারপারসনের গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতা বলে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে মহাসচিবদের। এ ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাঠামোতে আরও বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। যুক্ত হতে পারে কো-চেয়ারম্যান পদ। তবে এটি শুধু দলের জাতীয় সম্মেলন/জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমেই হতে পারে। এসব বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলীয় হাইকমান্ড তারেক রহমান সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, জনগণের ভোটে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে- নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়ার বিষয় নিয়েও আলাপ-আলোচনা ও কার্যক্রম চলছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত নির্বাচনোত্তর ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর নেতাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে- সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা চলছে। কাকে কোথায় মনোনয়নে ছাড় দেওয়া হবে, কিংবা কাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হতে পারে- এসব বিষয় নিয়েও কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া দলের ভিতরে কারা মনোনয়ন পাবেন এবং কারা মন্ত্রিত্ব পাবেন অথবা কারা কোন অবস্থানে থাকবেন- সেসব নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিজ নিজ পারফরম্যান্সের ওপর। দলের সব নেতার আমলনামা ইতোমধ্যে হাইকমান্ডের কাছে জমা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু উচ্চপর্যায়ের নেতার নাম চাঁদাবাজির অভিযোগের খাতায় যুক্ত হয়েছে। তাদের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাছাড়া যারা বিগত হাসিনা সরকারের সঙ্গে আঁতাত এবং নিজ দলের সঙ্গে বেইমানি করেছিলেন সেসব তথ্যও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ ধরনের নেতারা কোনো অবস্থাতেই এবার মনোনয়ন পাবেন না। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ‘খালিদ-পলক বা আরাফাতের’ মতো চাটুকার প্রকৃতির লোকদের মন্ত্রী বানানো দূরের কথা, এমপি পদে মনোনয়নও দেবে না বিএনপি। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের বিএনপির মনোনয়নে নতুন মুখের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।

ত্যাগী নেতাদের বড় পদে নিয়োগ দিয়ে মূল্যায়ন : দলের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মহানগর, জেলা ও উপজেলাসহ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি ত্যাগী নেতাদের দলের বড় বড় পদে নিয়োগ দিয়ে মূল্যায়ন করা শুরু করেছেন তারেক রহমান। দলীয় গঠনতন্ত্র ও চেয়ারপারসনের ক্ষমতাবলে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অতি সম্প্রতি যশোর জেলা বিএনপির সদ্য বিদায়ি আহ্বায়ক এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম তরিকুল ইসলামের স্ত্রী অধ্যাপক নার্গিস বেগমকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ২০ মে যশোর গঠিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক হন অধ্যাপক নার্গিস বেগম। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দলের দুর্দিনে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত নেতা-কর্মীরা। তারা জানিয়েছেন, কঠিন সময়ে দলকে ধরে রাখার পুরস্কার হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক নার্গিস বেগম। একই সঙ্গে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াসিনকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই এ ধরনের আরও বেশ কজন ত্যাগী নেতাকে বড় পদে নিয়োগ দিয়ে মূল্যায়ন করা হতে পারে।

তরুণ নেতাদের প্রাধান্য : সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কমিটি গঠনের সর্বস্তরে তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপি। জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যন্ত সর্বত্রই সাংগঠনিক ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা। বেশি চমক দেখা যাচ্ছে এবার জেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে। ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদেরই এসব কমিটিতে বেশি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের ওপর নতুন নতুন দায়িত্ব বণ্টন করে দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে। আগামী জাতীয় কাউন্সিলে এর প্রতিফলন আরও বেশি দেখা যাবে বলে দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। তাছাড়া তারেক রহমান তনয়া ব্যারিস্টার জাইমা রহমানও সরাসরি যুক্ত হতে পারেন বিএনপি রাজনীতিতে। দায়িত্ব পেতে পারেন সাংগঠনিক কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে। ইতোমধ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ব্রেকফাস্ট প্রেয়ার’ এ অংশ নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে।

জানা যায়, বিগত দেড় যুগ ধরে বিদেশে (লন্ডনে) থেকে নেতৃত্ব প্রদানের কারণে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বেশির ভাগ নেতাই এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। কোন নেতার কী অবস্থা সেসব এখন তাঁর নখদর্পণে। ফলে কাকে কী দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন সেসব বিষয়ে সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন তিনি। তাছাড়া তরুণ নেতাদের ওপর যথেষ্ট আস্থাও রাখছেন তিনি। বাস্তবতা ও বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নেতৃত্বে আনছেন তিনি। এক্ষেত্রে মেধা, পরিশ্রম ও ত্যাগকে বিবেচনায় রেখে গঠন করা হচ্ছে দলের বিভিন্ন স্তরের কমিটি। তরুণ নেতৃত্বে আস্থা রেখে দলীয় কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক করেছেন দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হককে। একইভাবে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক করেছেন রফিকুল আলম মজনুকে। কর্মিসভা, কর্মশালা, কিংবা সভাসমাবেশের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী ও চাঙা রাখতে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকে।

এসব বিষয়ে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু  বলেন, নতুনদের স্থান করে দেওয়াটাই পুরোনোদের কর্তব্য। নতুন-পুরোনোর সমন্বয়েই কমিটি দিচ্ছে বিএনপি। পুরোনোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের শ্রম দুটো মিলেই দল ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এজন্যে পুরোনোদের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুনদের কাজকর্ম এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ  বলেন, তরুণদের নেতৃত্বে আসার পথ উন্মুক্ত থাকতে হবে। তাদের সুযোগসুবিধা বাড়াতে হবে। তরুণদের মধ্যে যারা দক্ষ, যোগ্য এবং আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছে তারা ইতোমধ্যে নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কারণে তরুণ নেতাদের জন্য সুযোগটা আরও বাড়ানো উচিত। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বিএনপি আজ একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে। তিনি দলকে সুসংহত করার পাশাপাশি দলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করছেন। নতুন ও পুরোনোর সমন্বয়ে আগামীতে বিএনপির একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করতে তিনি বদ্ধ পরিকর।বাংলাদেশ প্রতিদিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions