ডেস্ক রির্পোট:- গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনে একটি বসত ঘর পুড়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
অগ্নি দুর্ঘটনায় এক চাকমার ঘর পুড়ে যাওয়ার পর সেটিকে বাঙালিদের হামলা এবং অগ্নিসংযোগ বলে অপপ্রচার চালায় একটি গোষ্ঠী। আর এর মাধ্যমে সেখানে দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বগাছড়ি কৈলাশ পাড়ায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে স্থানীয় মন্টু চাকমার ঘর পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটিকে ইউপিডিএফ তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ও স্থানীয় ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে ‘স্যাটেলার কর্তৃক পাহাড়ীর ঘর পোড়ানো’শিরোনামে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাপক অপপ্রচার শুরু করে। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে।
ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, যারা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাহাড়ে খুন, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
একই সাথে সরকার, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। গত দুই দশক ধরে তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে মিথ্যা ও বানোয়াট অপতথ্য ছড়িয়েছে, যা সা¤প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আরও বেড়ে চলছে। স্থানীয়রা বলছে, ছাত্র জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর তার দোসরেরা ভারতের মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামেও অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ধারাবাহিকতায় এ চক্রটি সেখানে পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির একাধিক অপচেষ্টা করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। যার অংশ হিসেবে তারা দুর্ঘটনাজনিত কারণে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেরাই স্বজাতি পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে। এরপর এ ঘটনার দায় বাঙালিদের উপর চাপানোর অপচেষ্টা করছে।
এ অপকর্ম করতে গিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপতথ্য ছড়িয়ে দিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের চক্রান্ত করছে। নানিয়ারচরের ঘটনাও তাদের এ চক্রান্তের অংশ বলে জানান স্থানীয়রা। যদিও স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর তড়িৎ উপস্থিতিতে সত্য ঘটনার দ্রত জনসম্মুখে আসায় বিষয়টি আর বেশী দূর গড়ায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় অধিবাসীরা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেননা এরূপ উদ্দেশ্যমূলক কর্মকান্ড অনাগত দিনে ইউপিডিএফ কর্তৃক বড় ধরনের কোনো নাশকতা সৃষ্টির ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করেন তারা। উল্লেখ্য ঘটনাস্থলে পুনর্বাসিত বাঙালিদের বন্দোবস্তকৃত রেকর্ডীয় জায়গা রয়েছে। একসময় এসব জায়গায় বাঙালিরা বসবাস করলেও ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকার গুচ্ছগ্রাম নীতি বাস্তবায়ন করার ফলে বাঙালিরা কথিত বন্দিশালায় চলে যায়। এরপর জেএসএস শান্তিবাহিনী এসব জায়গা জবরদখল করে।
স্থানীয় বাঙালিরা জানান, ২০০৮ সাল থেকে আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ মূলদল) পরিকল্পিতভাবে এসব জায়গা থেকে বাঙালিদের চিহ্ন মুছে ফেলতে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে উপজাতিদের সেখানে বসতি স্থাপন করতে বাধ্য করছে এবং বাঙালিদের বেশ কিছু জায়গায় দখলের উদ্দেশ্যে নিজেরাই টিনশেড ঘর নির্মাণ করে সেখানে উপজাতীয়দের থাকার ব্যবস্থা করেছে। বাঙালিরা এইসব জায়গার মালিকানা দাবি করার চেষ্টা করলেই কৌশলে তারা তৈরী করছে সা¤প্রদায়িক কলহ সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি। এভাবে বছরের পর বছর তারা বাঙালিদের উসকে দিতে ও ফাঁদে ফেলতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে আসছে।
গতকাল সকাল থেকেই ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে মন্টু চাকমার ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বাঙালিদের দায়ী করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণা নিয়ে সচেতন মহল মনে করেন, পাহাড়ে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিতে এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে ইউপিডিএফ।