আন্দোলনে নৃশংসতা ছিল সাবেক সরকারের পরিকল্পিত কৌশল’– জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৪৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, ‘আন্দোলনে নৃশংসতা ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত কৌশল, যা ছাত্র-জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে ব্যাপক গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।’
আজ সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া আন্দোলনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা জানানো হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধও গঠন করতে পারে। জাতীয় নিরাময় এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধতা এবং ন্যায়বিচার অপরিহার্য।’

বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুমান করা হয়েছে যে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ ছিল শিশু। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে যে তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনকারী উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত থেকে, কিন্তু এর পেছনে ছিল ধ্বংসাত্মক ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি এবং প্রশাসন থেকে সৃষ্ট বিস্তৃত ক্ষোভ, যা অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি করেছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংস পন্থা ব্যবহার করে এই বিক্ষোভগুলো দমনে পদ্ধতিগতভাবে চেষ্টা করেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গত সেপ্টেম্বরে একটি দল পাঠায়। যে দলের সদস্য মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ছিলেন, যাতে প্রাণঘাতী ঘটনাগুলোর বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তথ্য অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার তদন্তের সঙ্গে ব্যাপক সহযোগিতা প্রদর্শন করেছে, অনুরোধকৃত প্রবেশাধিকারের অনুমতি দিয়েছে এবং যথেষ্ট নথিপত্র সরবরাহ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, যারা সরাসরি বিক্ষোভ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বর্ণনা করেছে যে কীভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার বিভিন্ন কর্মকর্তা একাধিক বড় অভিযানের নির্দেশনা দেন ও তদারকি করেন। সে মোতাবেক নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করেছিল বা নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছিল।

এতে দেখা গেছে যে নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল। এর মধ্যে এমন ঘটনাও ছিল, যেখানে লোকদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আন্দোলনের সময় সংঘটিত ভয়াবহ অন্যায়গুলোর সত্য উন্মোচন ও নিরাময় করা এবং জবাবদিহির মুখোমুখি হওয়া। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতার প্রতিকার ও পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটতে পারে, তা নিশ্চিত করা।’

ভলকার তুর্ক বলেন, ‘আমার কার্যালয় এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় জবাবদিহি এবং সংস্কারপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions