রাঙ্গামাটি:- বেসরকারী মোবাইল অপারেটর রবি’র নিকট থেকে এক কালিন ৫ কোটি আর প্রতি মাসে ৩৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ। তাদের দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে বেসরকারী মোবাইল অপারেটর রবি’র অন্তত ২১টি নেটওয়ার্ক টাওয়ার নষ্ট করে দিয়েছে তারা। তাদের দাবীকৃত চাঁদা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না করায় মঙ্গলবার বিকেলে রাঙ্গামাটি থেকে টাওয়ার ঠিক করতে যাওয়া উপজাতি সম্প্রদায়ের এক কর্মচারীকে তুলে নিয়ে গেছে ইউপিডিএফ। তার বাড়ি রাঙ্গামাটি শহরেই।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে একাধিক সূত্র ও কোম্পানীটির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, অপহৃত শ্রমিক রবি কোম্পানীর সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা হাইজিন সার্ভিস লিমিটেড এর হয়ে দৈনিক মুজুরির ভিত্তিতে নিয়োজিত ছিলো।
তিনি জানান, খাগড়াছড়ির পানছড়ির ০৩ নাম্বার টাওয়ারের জেনারেটর মেরামত করতে গেলে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে রবির কর্মকর্তাদের সেখানে যেতে বলা হয়। এই বিষয়টি বিভিন্ন সংস্থাকে জানানো হলেও অপহৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো অভিযোগ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন পানছড়ি থাকার ওসি জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, আমরা অপহরণের ঘটনাটি শুনেছি।
এদিকে, স্থানীয় একটি সূত্রে জানাগেছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিকে চেঙ্গি ইউনিয়নের ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত মনিপুর এলাকায় রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল অপহরণের বিষয়টি শুনেননি বলে জানিয়ে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্ঠা করছি; এছাড়াও কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে পুলিশ।
জানাগেছে, মালয়েশিয়ার কোম্পানী রবি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে ই-ডটসিও নামের একটি কোম্পানীর মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের মোবাইল নেটওয়ার্কিং টাওয়ারগুলো পরিচালনা করে। পুরো দেশে রবির প্রায় ১৮ হাজার টাওয়ারের মধ্যে পার্বত্য তিন জেলায় ৩২০ টি টাওয়ার রয়েছে। দেশের ৬১ জেলায় রবির টাওয়ারগুলো সচল রাখা সম্ভব হলেও পাহাড়ের টাওয়ারগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতি মাসে তাদের গুনতে হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
পাহাড়ের তথাকথিত উপজাতীয় আঞ্চলিকদলগুলোকে চাঁদা হিসেবে এই টাকা পরিশোধ করে কোম্পানীটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি চাঁদা দাবির পাশাপাশি এককালীন ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হলে এতো বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোর্ধে ব্যর্থ হলে ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীরা রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর ও খাগড়াছড়ি জেলার সদর, দীঘিনালা, মহালছড়ি, পানছড়ি, কবাখালীসহ কয়েকটি এলাকায় সর্বমোট ২১টি টাওয়ার লাইন কেটে দেওয়া, ব্যাটারি লুট করে নেওয়াসহ জেনারেটর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে।
এতে করে সার্বিকভাবে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে রবি ও তার অংশীদার কোম্পানীগুলো। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক মন্তব্য করে টাওয়ার পরিচালনাকারি কোম্পানীর স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা তথা রবি কোম্পানী আসলে সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার জায়গা থেকে পাহাড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার পরিচালনা করছি। কারণ পশ্চাদপদ এই এলাকাটিতে মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয় যাতে করে অত্রাঞ্চলের প্রার্ন্তিক জনগোষ্ঠির লোকজন আধুনিক সভ্যতার সাথে নিজেদের অংশিদারিত্ব নিশ্চিত করতে পারে।
ভতুর্কী দিয়ে পাহাড়ে নেটওয়ার্ক চালু আছে বলেই আজ ঋতুপর্নার মতো সেলিব্রেটি খেলোয়ারদের সম্পর্কে দূর্গম মানুষজন জানতে পারছে। ই কমার্সের মাধ্যমে পাহাড়ের পণ্য সারাবিশে^ পৌছে যাচ্ছে। এই মোবাইল কোম্পানীগুলোর নেটওয়ার্কের কারনেই পাহাড়ের মানুষের সাথে সারাবিশে^র মানুষজনের যোগাযোগ হচ্ছে মুহুর্তের মধ্যেই। আর আমাদের বিপদগামী কিছু মানুষ আজ নিজেদের জাতির ভাগ্যোন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে বলেও মন্তব্য করেন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তা তুহিন চাকমা।
সংশ্লিষ্ট্য মোবাইল কোম্পানীগুলোর সাথে আলাপকালে জানাগেছে, প্রতি মাসে প্রায় তিন কোটি টাকা পাহাড়ের তথাকথিত আঞ্চলিক রাজনৈতিকদলীয় সন্ত্রাসীদের প্রদান করে বেসরকারী মোবাইল অপারেটরগুলো। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইউপিডিএফ তাদের রাজনৈতিক কুট কৌশল তথা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে পাশর্^বর্তী রাষ্ট্র থেকে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের মিশনে নেমেছে।
এই মিশনের অংশ হিসেবেই ভারতে অস্ত্র সংগ্রহে পাঠানো হয়েছে ইউপিডিএফ’র অন্তত ২০জন উচ্চ পর্যায়ের কালেক্টরকে। সম্প্রতি মিজোরামে ও ত্রিপুরায় ইউপিডিএফ এর বেশ কয়েকজন কালেক্টর অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭ রাইফেলসহ গোলাবারুদ নিয়ে সেখানকার পুলিশ ও বিএসএফ এর হাতে আটক হওয়ার পর ইউপিডিএফ এর অস্ত্র সংগ্রহের বিষয়টি সামনে আসে।
জানাগেছে, এদের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কোটি কোটি টাকা পাঠানো হয়। সেলক্ষেই সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাহাড়ের বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫% চাঁদা এখন আদায় করা হচ্ছে ১৫ থেকে ৩০% পার্সেন্ট পর্যন্ত। সরকারি-বেসরকারি এমন কোনো খাত নেই যেখান থেকে চাঁদা আদায় করে না পাহাড়ের আঞ্চলিকদলগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের জিম্মি করে অন্তত শতকোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য মাত্রায় টাওয়ার ধ্বংসের পাশাপাশি মানুষজনকে অপহরণ করছে উপজাতীয় আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা।