যখন সাংবাদিকতার পতন হয়, তখন রাষ্ট্রেরও পতন হয়: ফারুক ওয়াসিফ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন, যখন সাংবাদিকতার পতন হয়, তখন রাষ্ট্রেরও পতন হয়। ২০১৩-১৪ সালে শাহবাগ, শাপলায় যা হয়েছিল, আমরা তা বলতে পারিনি।
যখন সংবিধান কাটাছেঁড়া করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল, তখনই তো বোঝা গিয়েছিল এই দল আর কোনো দিন এই দেশে কোনো দিন নির্বাচন দেবে না, এক ব্যক্তির শাসন চলবে।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্র রূপান্তরের সময়ে সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভাটির আয়োজন করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে)।

তিনি বলেন, আমাদের মিডিয়ার একটা শ্রেণি বৈষম্য ও মতাদর্শগত বৈষম্য আছে। মুক্তিযুদ্ধ বলতে যে বয়ান আমাদের মিডিয়া বিশ্বাস করে, তা ধর্মগ্রন্থের মতো বানিয়ে ফেলেছে। সেই মুক্তিযুদ্ধ জনগণের প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধ কিনা, মুক্তিযুদ্ধের ভেতর যে গণযুদ্ধ ছিল, কৃষকের অংশগ্রহণ ছিল, আওয়ামী লীগের মধ্যে একাত্তরের একটি অংশ যে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, ভারত যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কবজা করে ফেলেছিল, এসব কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের গল্পের মধ্যে আসে না।

ফারুক ওয়াসিফ দাবি করেন, এই মুক্তিযুদ্ধ তো মানুষ ধারণ করে না। সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখনো বেরিয়ে আসেনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বয়ানের যে এলিট রুচি আছে, গণমাধ্যম সেটাকে আদর্শ মানদণ্ড ধরে তা আমাদের দেশের চাষা-ভূষা, উঠতি মধ্যবিত্ত, রক্ষণশীলরা ধারণ করে না। পত্রিকার খবরে বা ছবিতে সবার প্রতিনিধিত্ব নেই।

যেকোনো বিরোধীকে রাজাকার, জঙ্গি বলা হতো, বিদেশিদের বন্ধু ভাবা হতো, দেশের মানুষকে শত্রু ভেবে অত্যাচার, নির্যাতন করা হতো। তখনই কী আমরা বুঝিনি কী সামনে আসছে? যখন বিডিআর হত্যা হলো, হেফাজতের কালো রাত (৫ মে), সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখনও মিডিয়া লিখছে না। কারণ এই অভ্যত্থানের কোনো মুখপত্র নেই। ৪৭, ৫২, ৬৯, ৯০ এর অভ্যত্থানে মুখপত্র ছিল আজাদ, ইত্তেফাক বা সংগ্রাম। কিন্তু এই অভ্যুত্থানের মুখপত্র নেই। আমরা কোনো সময় একটি গোষ্ঠী অর্থাৎ উঠতি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মুখপত্র দেখিনি। যাদের জঙ্গি, রাজাকার বা কিশোরগ্যাং বলা হতো, তারাইতো এসব তকমা ছিড়েছুড়ে অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। কোনো পত্রিকা তাদের মুখপত্র নয়। আবার বিডিআর গণহত্যা বা জুলাই হত্যাকাণ্ড বা আমাদের সীমানা আবার হাত ছাড়া হবে না, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

পিআইবি মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ২০১৮ সালের পর তারা বড় বড় দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক দুর্নীতির কথা তারা বলেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচন যে রাতের আঁধারের নির্বাচন তা কিন্তু মিডিয়া বলেনি। ২০১৪-১৫ সালে বিচারের নামে যে একধরনের প্রতিহিংসামূলক ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, সে কথা এখনো মিডিয়াগুলো বলছে না।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা খেপেছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা তাকে স্বৈরাচার ও খুনি বলায়। কারণ এর আগে ছাত্রদল বা বিএনপি বলেছিল। এটি সহ্য করা হয়েছিল, দেশে গণতন্ত্র রয়েছে বোঝানোর জন্য। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা যে স্বৈরাচার ও খুনি বলেছে, এটি সহ্য করতে পারেনি। এ কারণে ওই রাতের পর শেখ হাসিনা গণহত্যা চালিয়েছিল। কারণ সে জানে এই স্বৈরাচার সবার মুখে প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে।

সিএমইউজের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজের সভাপতিত্বে এতে আলোচক ছিলেন নয়াদিল্লি বাংলাদেশের হাই কমিশনারের প্রেস মিনিস্টার ফয়সাল মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আর রাজী ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সুমন রহমান।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions