ডেস্ক রির্পোট:- ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী আমতলী গ্রামে ৯ এমএম পিস্তল, ভারতীয় ২ লাখ ২১ হাজার রুপি এবং বাংলাদেশী ২৫ হাজার টাকাসহ খাগড়াছড়ির উপজাতি বাসিন্দা সমাজ প্রিয় চাকমা আটক হওয়ার ঘটনা একটি বড় সংকট সৃষ্টি করেছে।
এ ঘটনায় সবার আগে যে বিষয়টি মাথায় আসে তা হলো—এ ধরনের কার্যক্রম কেবল একটি ছোটো বা স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং এটি দেশের বৃহত্তর নিরাপত্তা, সামাজিক শৃঙ্খলা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। ইতোমধ্যেই, এমন ঘটনা দেশের ভাবমূর্তিতে বিশেষভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশের নাগরিকরা, বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি মানুষ, যখন এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তখন আন্তর্জাতিক মহলেও এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা অস্ত্র পাচারের মতো কার্যকলাপ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দেয়। উপজাতি সম্প্রদায়ের সমাজ প্রিয় চাকমা নাগরিক থেকে ভারতের পুলিশ দ্বারা অস্ত্র উদ্ধার হওয়া, দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এর ফলে, সাধারণ জনগণের মধ্যে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়, যা দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে।
এ ছাড়া, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ব্যাপকভাবে আঘাত করে। একদিকে, দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং অন্যদিকে, দেশের আন্তর্জাতিক স্তরে শক্তিশালী প্রতিবাদ কিংবা সম্পর্কের অবনতির সৃষ্টি করে। যদি এই পরিস্থিতি দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে, তবে তা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও বিপদে ফেলতে পারে।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বড় ক্ষতি হলো, এটি সমাজের মধ্যে ভুল বার্তা প্রেরণ করে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যারা জড়িত, তারা শুধু দেশের নিরাপত্তাই বিঘ্নিত করে না, বরং সেই জনগণের জীবনমান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেও বিপন্ন করে। সম্প্রদায়ভিত্তিক সংঘাত এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব কখনোই দেশের উন্নতির পথে সহায়ক হতে পারে না।
এক্ষেত্রে, উপজাতি সমাজের উচিত এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে এসে শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে এগিয়ে আসা। যদি তারা অস্ত্রের পরিবর্তে শিক্ষা, উন্নয়ন এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোযোগ দেয়, তবে এর ফলে সমাজে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে এবং এটি দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য সহায়ক হবে।
এই ধরনের ঘটনায়, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। যদি আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই, তবে সরকার এবং প্রশাসনের একত্রিত উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে, উপজাতি সমাজের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যের সুযোগ সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান, তাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সামাজিক অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অবশ্যই, এই ঘটনাগুলোর পরিণতি শুধু খাগড়াছড়ি বা পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না। তা দেশের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করবে। তাই, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব থেকে বের হয়ে আসার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ, সুস্থ এবং উন্নত সমাজ গড়ে তোলা আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
উল্লেখ যে, গত ১৫ জানুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর একটি অস্ত্র চালান মিজোরাম পুলিশ আটক করে, কিন্তু এর এক সপ্তাহের মধ্যে আবারও ভারত থেকে উপজাতি নাগরিকদের অস্ত্র আটক হওয়া আমাদের জন্য এক উদ্বেগজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।