দেশের প্রথম নারী ফরেস্টার মিতা তঞ্চঙ্গ্যা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৪ দেখা হয়েছে

বান্দরবান :- মিতা শব্দের একটি অর্থ বন্ধু। পাহাড়ের মেয়ে মিতা তঞ্চঙ্গ্যা দেশের প্রথম নারী ফরেস্টার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। দেশে এ পদে তিনি হবেন বন অধিদপ্তরের প্রথম নারী কর্মকর্তা। বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের বঙ্গপাড়ার গুণধর তঞ্চঙ্গ্যার মেয়ে তিনি। বন কি এবার প্রকৃতই এক বন্ধু খুঁজে পেল?

মিতা রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার তাইতংপাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর এফএসটিআইয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে ২০২৩ সালের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেন। সেই বছরের জুন মাসে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ফরেস্ট ডিপ্লোমায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি চট্টগ্রামের ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট থেকে ২৪তম ব্যাচে ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি বন অধিদপ্তরের ফরেস্টার পদের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

পরিবারে পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বড় বোন সহকারী শিক্ষক এবং অন্য ভাইয়েরা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। মা ছিলেন গৃহিণী।

মিতা তঞ্চঙ্গ্যা জানিয়েছেন, তাঁর আগে ফরেস্ট্রি নিয়ে পাহাড়ের মেয়েদের পড়াশোনার অভিজ্ঞতা ছিল না। পছন্দের বিষয় বলে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন।

মিতার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার জীবনও সহজ ছিল না। পাহাড়ের পথ যেমন দুর্গম, তেমনি ছিল তাঁর শিক্ষাজীবন। তাঁর সঙ্গে ছিল না কোনো মেয়ে সহপাঠী। তাই ছেলেদের সঙ্গে কাটাতে হয়েছে প্রায় পুরো শিক্ষাজীবন। মিতা বলেছেন, ‘আমাদের আদিবাসী মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। আমি চাই এই কঠিন পেশায় পাহাড়ের আদিবাসী মেয়েরা আরও এগিয়ে আসুক।’ এ ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতার বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মিতা। জানিয়েছেন, মেয়েদের শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে প্রয়োজন ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা। দেখা গেছে ৫ ফুট ২ থেকে ৩ ইঞ্চি থাকার কারণে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ভাইভায় উচ্চতার কারণে বাদ পড়ে গেছেন অনেকে। একই কারণে শুধু পাহাড়ি মেয়েরাই নয়, বাঙালি মেয়েরাও বাদ পড়ে গেছেন। বিষয়টি শিথিল করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মিতা।

সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর শিক্ষকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে মিতা ছুটে গিয়েছিলেন প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে। মিতা বলেন, ‘এটা আমার এবং আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য গৌরবের বিষয়। ভবিষ্যতে ফরেস্টার হিসেবে আরও নারী নিয়োগ পাবে, এটাই আমি আশা করি।’

ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী নিজের শিক্ষার্থীর সাফল্যে আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দেশের প্রথম নারী ফরেস্টার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় আমি গর্বিত। ভবিষ্যতে যাতে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা ফরেস্টার পদে আরও সুপারিশপ্রাপ্ত হতে পারে, তার জন্য নিয়োগবিধি সংশোধনসহ নারীদের ক্ষেত্রে শারীরিক যোগ্যতার বিষয়টি শিথিল করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

পাহাড়ের মেয়ে মিতা। বেড়ে উঠেছেন সবুজ বনানীর মাঝে। তাঁর হাত ধরে এবার বনগুলো খুঁজে পাক এক সত্যিকারের বন্ধু।আজকের পত্রিকা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions