দ্য হিন্দুর চোখে খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রিপেৃাট:- ‘খালেদা জিয়া: বেগমের প্রত্যাবর্তন’-এই শিরোনামে গতকাল অনলাইন দ্য হিন্দু প্রকাশিত রিপোর্টে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তার পার্টি বাংলাদেশে যখন আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন তিনি বাংলাদেশে আবার লাইমলাইটে। সাংবাদিক কল্লোল ভট্টাচার্যের লেখা ওই প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে কীভাবে হত্যা করা হয়, কীভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, তা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন: ১৯৮১ সালের ৩০শে মে ভোরবেলা। চট্টগ্রামের আকাশ ঢেকে ফেলেছে বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা মেঘ। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের ছাদে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গোলাগুলির শব্দ পেলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের একজন সাহসী পাকিস্তানি সেনা হিসেবে পরিচিত। পরে তিনি জাতীয়তাবাদী একজন অফিসার হন এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। জিয়াউর রহমান পালিয়ে থাকার মতো মানুষ নন। তিনি ওই সময় নৈশকালীন পোশাকে ছিলেন। সেই অবস্থায়ই গোলাগুলির উৎসের কাছে চলে যান কি হয়েছে চেক করতে। ঠিক তখনই বুলেট এসে আক্ষরিকভাবে তার শরীরকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলে। তার খুনিরা ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হন। কারণ, মৌসুমি রাজনীতিক আবদুস সাত্তার ততক্ষণে দ্রুততার সঙ্গে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমর্থনে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে নেন। এই নাটকীয় পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনৈতিক দৃশ্যপটে চলে আসেন। রিপোর্টে বলা হয়, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার খবর শোনার পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। এর আড়াই বছর পরে আবদুস সাত্তারের কাছ থেকে দলের দায়িত্ব নেন খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপি’র দায়িত্ব নিজের হাতে খালেদা জিয়া নেন ১৯৮৪ সালের ১৩ই জানুয়ারি। অস্থিতিশীল এই দেশে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। ১৭ই মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা।

খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দু’টি ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। প্রথম জন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে থাকা, বিদ্রোহ করে দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বাঙালি অফিসারের স্ত্রী। অন্যদিকে পাকিস্তানবিরোধী অগ্নিঝরা একজন নেতার কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু তখনকার প্রেসিডেন্ট এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তারা দু’জন ১৯৮৪ সালে একজোট হন। দু’টি রাজনৈতিক জোট একত্রিত হয়। এরশাদের বিরুদ্ধে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। অন্যদিকে ১৫ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৮৬ সালে একটি জালিয়াতির নির্বাচন করেন এরশাদ। জাল ভোটে ক্ষুব্ধ হয়ে এই দুই জোট একসঙ্গে হাত মিলায় এবং ১৯৯০ সালে চূড়ান্ত পর্যায়ে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয় পায় বিএনপি। এরপর মিসেস জিয়া, যিনি বেগম জিয়া নামে বেশি পরিচিত, তিনি বাংলাদেশে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি যখন বাংলাদেশের অনেক সমস্যা নিয়ে কাজ করছিলেন, তখনই এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হন। এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে বিএনপি সরকারকে অযোগ্য বলে অভিহিত করেন শেখ হাসিনা। বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয় পেতে সক্ষম হয় বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ আনে আওয়ামী লীগ। ফলে তাদের ক্ষমতা ছাড়তে হয়। এরপরই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।

১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতিপক্ষ শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছেন খালেদা জিয়া। নতুন শতাব্দীর শুরুর দিকে তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সমর্থনে আবার ক্ষমতায় ফেরেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। শেখ হাসিনা যদিও তাকে পরবর্তী ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে রেখেছিলেন, তবু মাঠপর্যায়ে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল বিএনপি। হাসিনার যুগে খালেদা জিয়া যখন পেছনে পড়ে ছিলেন, তখন প্রতিদিন দলীয় কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন তিনবার বর্জনের জন্য দলীয় যুদ্ধং দেহী মনোভাব বজায় রেখেছিলেন তারা।

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। এরপর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। তিনি বার বার বলেন, বর্তমানে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনি কোনো খারাপ মনোভাব পোষণ করেন না। এর মধ্যদিয়ে এমন একটি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কতোদিন স্থায়ী হয় তার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি এবং পর্যবেক্ষণ করছেন। বিএনপি অতীতে যখন নির্বাচন বর্জন করেছে, এটা জানা বিষয় যে, ২০২১ সালে খালেদা জিয়ার জটিল অপারেশনে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হাসপাতালের ডাক্তারদের ঢাকায় আসা থামায় নি শেখ হাসিনার শাসকগোষ্ঠী।

শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের বাইরে। বিএনপি আবার ক্ষমতায় ফেরার উজ্জ্বল অবস্থায় আছে। এমন অবস্থায় ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আরও একবার লাইমলাইটে এসেছেন। কিন্তু এ সময়ে তিনি অধিক মাত্রায় সতর্ক। এ মাসের শুরুর দিকে কাতার থেকে আসা একটি এয়ার এম্বুলেন্স তাকে উড়িয়ে নিয়েছে লন্ডনে, বিশেষ চিকিৎসার জন্য। সেখানে তিনি তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। ২০০৬-০৮ সময়কালে সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তারেক রহমানকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তারপর থেকে তিনি নির্বাসনে লন্ডনে রয়েছেন। গত সপ্তাহে ২০০৮ সালের একটি দুর্নীতি মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে এর আগে দেয়া ১০ বছরের জেলের রায়।

বাংলাদেশের রাজনীতি ভগ্নদশার। তার মাঝে খালেদা জিয়াকে দেখা হয় টিকে থাকা একজন রাজনীতিক বা সারভাইভার হিসেবে। অন্তর্বর্তী সরকার আবার যখন নির্বাচন ঘোষণা করবে তখন তার কৌশল আরও একবার পরীক্ষার মুখে পড়বে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions