শিরোনাম
পাহাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া ডিম ফুটিয়ে গড়েছে বনমোরগের খামার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন,প্রথম খসড়া তালিকায় নিহত ৮৫৮ জন, আহত সাড়ে ১১ হাজার আনুপাতিক হারে জাতীয় নির্বাচনের চিন্তা, বিএনপি কোন পথে সিভিল সার্ভিসে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা, কলমবিরতি-মানববন্ধন-সমাবেশের ঘোষণা সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে না, যন্ত্রগুলো কী করবে ইসি মঞ্চ প্রস্তুত আরেকটি এক-এগারোর? আসছে হাসিনা আমলের চেয়ে বড় বাজেট,আকার হতে পারে ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি,দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি প্রশাসনিক সংস্কারে ডিসিদের আপত্তি! বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন বেবী নাজনীন, জয়া আহসান ও ফাহিম আহমেদ

বেইলি রোডের কান্নাতেও কারও ‘ঘুম’ ভাঙেনি,রেস্তোরাঁয় অগ্নিঝুঁকি ঠেকাতে পদক্ষেপ নেই

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় ঠাসা গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারানোর পর কর্তৃপক্ষের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছিল। বেরিয়ে এসেছিল ভবনটিতে থাকা রেস্তোরাঁগুলোর অনুমোদনহীনভাবে গড়ে ওঠার তথ্য। এই ধরনের অবৈধ রেস্তোরাঁ বন্ধে এসেছিল নানা সুপারিশ, শুরু হয়েছিল অভিযানও। মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই সেই দৌড়ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের ‘ঘুমিয়ে’ যাওয়ার সুযোগে ‘মৃত্যুকূপ’ হয়ে গড়ে ওঠা অনুমোদনহীন রেস্তোরাঁগুলো চলছে আগের মতোই।

অনুমোদনহীন এই প্রতিষ্ঠানগুলো যে আগের মতোই চলছে, তা গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত ‘লাভলীন রেস্টুরেন্টের’ অগ্নিকাণ্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বহুতল আবাসিক ভবনে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁটিতে ন্যূনতম অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ—এমন নোটিশ দেওয়া হলেও কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারকাচিহ্নিত হোটেল ছাড়া দেশে রেস্তোরাঁর প্রকৃত সংখ্যা কত, সেই হিসাব কোনো সংস্থার কাছেই নেই। এ নিয়ে কখনো সমীক্ষা বা জরিপও হয়নি। রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির খসড়া হিসাবে দেশে ৫ লাখের মতো রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতেই আছে প্রায় ২৫ হাজার। এই সংখ্যার মধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুমোদন নেওয়া প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। আর দুই সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে প্রায় ৭ হাজার রেস্তোরাঁ। অবশ্য বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য রয়েছে ২ হাজার ৭০০।

সব সংস্থাই মোটা দাগে বলছে, তারকা মানের হোটেল-রেস্তোরাঁ ছাড়া ঢাকায় অবস্থিত আর কোনো রেস্তোরাঁর শতভাগ অনুমোদন নেই। সমিতিভুক্ত সব রেস্তোরাঁরও অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে মালিক সমিতি সূত্র।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেইলি রোডে অগ্নিবিভীষিকার পর রাজধানীর ধানমন্ডি, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান শুরু হয়। অনেক রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দেওয়া হয়। উচ্চ আদালত থেকেও অনুমোদনহীন সব রেস্তোরাঁয় অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশনা ছিল। তবে তা থেমে গেছে কয়েক মাস পরই। সিলগালা করে দেওয়া অনেক রেস্তোরাঁও ফের চালু হয়েছে।

এই অভিযান যে বন্ধ হয়ে গেছে, তা স্বীকার করেছেন রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি গতকাল শনিবার বলেন, তারা অনুমোদনহীন রেস্তোরাঁগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিলেন। নানা কারণে তা থেমে গেছে। উত্তরায় লাভলীন রেস্টুরেন্টে অগ্নিকাণ্ডের পর বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। রাজউকের চেয়ারম্যানের অনুমোদনের পর এই অভিযান শিগগিরই শুরু হবে।

ঢাকায় অবৈধ রেস্তোরাঁর সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবাসিক ভবনে থাকা সব রেস্তোরাঁই অবৈধ ও অনুমোদনহীন। অন্য যেসব রেস্তোরাঁ রয়েছে, সেগুলোরও শতভাগ অনুমোদন নেই।

রেস্তোরাঁ মালিক, ফায়ার সার্ভিস ও রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি রেস্টুরেন্ট চালু করতে হলে সরকারি অন্তত ১২টি সংস্থা বা দপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। এগুলো হলো রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব সংস্থা থেকে অনুমোদন বা ছাড়পত্র ছাড়া রেস্টুরেন্ট চালু করার সুযোগ নেই। কিন্তু রাজধানীর বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টই ২-৩ সংস্থা থেকে অনুমোদন বা ছাড়পত্র নিয়েই দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের পর দেখা গেছে ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকে না। বহুতল ভবন বা ছাদে রেস্তোরাঁ গড়ে উঠলেও ভবনে মাত্র একটি সরু সিঁড়ি, তা-ও নানা সরঞ্জাম দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়। অধিক সাজসজ্জা, গ্যাস সিলিন্ডার আর নিয়ম মেনে রান্নাঘর তৈরি না করায় একেকটা রেস্তোরাঁ মৃত্যুকূপ হয়ে আছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস আইন অনুযায়ী শুধু নোটিশই দিতে পারে, সেই কাজের বাইরে এই অনিয়ম বন্ধে কিছু করার থাকে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেস্টুরেন্ট থাকা ভবনটি নকশা মেনে হয়েছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব রাজউকের। আবার বিদ্যুৎ-গ্যাস লাইন ঠিক আছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর। স্থানীয় প্রশাসন হিসাবে সিটি করপোরেশন দেখে থাকে সবকিছু নিয়মের মধ্যে চলছে কি না। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের সুযোগ নেই। ভবনটি বা প্রতিষ্ঠানটি ফায়ার সিস্টেম ঠিক রেখেছে কি না, তা দেখবে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু এসব সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে বছরের পর বছর অনুমোদনহীন রেস্টুরেন্ট গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অনুমোদন না নিয়ে চলা রেস্তোরাঁগুলো অগ্নিঝুঁকি ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে তারা নিয়মিত নোটিশ দিচ্ছেন; কিন্তু বন্ধ করতে পারছেন না। এই কাজ ফায়ার সার্ভিসেরও নয়। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নেই। এজন্য তারা অভিযানও চালাতে পারেন না।

ফায়ার সার্ভিসের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ রেস্তোরাঁগুলো একেবারে বন্ধ না করে তা বৈধভাবে চালু রাখতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সরকারে কাছে সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিও একটি সুপারিশমালা তৈরি করে দিয়েছে। তাতে অনুমোদন দেওয়া সব সংস্থা নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি বা তদারকি কমিটি করতে বলা হয়েছিল। গত ১০ মাসেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা ভবন মালিক ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সচেতন ও সতর্ক করে আসছেন। যেহেতু রেস্তোরাঁ ব্যবসা লাভজনক; তাই মালিকদের কেউ সচেতন হচ্ছেন না। কিন্তু আগুন লাগলে, প্রাণহানি হলে ফায়ার সার্ভিসের দিকেই আঙুল ওঠে। তাই এখনই ক্রেতাদের সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। পর্যাপ্ত সিঁড়ি না থাকলে বহুতল ভবনে, ছাদে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্টে কারও যাওয়া উচিত নয়। ভিড় দেখলে এসব রেস্তোরাঁ এড়িয়ে চলাই ভালো।

রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনবিআর বা সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া ছাড়া অন্য যে কোনো সংস্থার ছাড়পত্র নেওয়া খুবই কঠিন। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালাতে নিয়মকানুন এত কঠিন করা হয়েছে যে, ১২ জায়গা থেকে অনুমোদন নিয়ে এসে ব্যবসা পরিচালনা করা খুবই ভোগান্তির। দিনের পর দিন এসব সংস্থার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও অনুমোদন পাওয়া যায় না। যে কারণে রেস্টুরেন্ট মালিকরা দুই-এক জায়গা থেকে অনুমোদন নিয়েই তাদের ব্যবসা চালাচ্ছেন।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, তারা অনুমোদন নেওয়ার জন্য বারবার ওয়ানস্টপ সেন্টারের কথা বলে আসছেন। সেটা না থাকায় তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মূলত তাদের ফাঁদে ফেলে নানা সংস্থা সুযোগ নেয়।

তিনি বলেন, যে নিয়ম রয়েছে, তাতে কোনো মালিকেরই শতভাগ অনুমোদন নিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করা সম্ভব নয়। শতভাগ নিয়ম মেনে কোনো রেস্টুরেন্টও নেই। এজন্য আইনকানুন সহজ ও ভোগান্তিমুক্ত করতে হবে। এরপর কেউ আইনের ব্যত্যয় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ বন্ধ করা, অভিযান পচালিয়ে কোনো সমাধান আসবে না। এটা করা হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কর্মীরা বেকার হবেন এবং অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব পড়বে।কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions