খাগড়াছড়ি:- উশ্যেপ্রু মারমা খাগড়াছড়ির চিহ্নিত বর্ণচোরা। তিনি দুর্নীতিবাজ-ভূমি দখলকারী ও প্রতারক। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর ছিলেন। সর্বশেষ শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীও ছিলেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা।
যদিওবা ক্লাসে তৃতীয় শ্রেণি রোল নাম্বার অর্জন করে জামাত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর হয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা।
তিনি কমিটির ৮ নম্বর সদস্য। এ নিয়ে হতবাক খাগড়াছড়িবাসী। তিনি এখন নতুন রূপে আগামীতে খাগড়াছড়ি আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন প্রতারক,দুর্নীতিবাজ ও ভূমি দখলদার উশ্যেপ্রু মারমা। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একটি আঞ্চলিক সংগঠনের ব্যানারে উশ্যেপ্রু মারমা খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যপ্রুমারমা নির্বাচিত হন।
অভিযোগ রয়েছে, চাকুরি প্রলোভন দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) উশ্যেপ্রু মারমার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তৎকালীন দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আওয়ালের পাঠানো আদেশে দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করেন তৎকালীন অতিরিক্ত খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবুল হাশেম। তিনি তদন্ত করে দুদকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছিলেন কমিশন। কিন্তু মাঝপথে তদন্ত থেমে স্থানীয় যায় সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার সাবেক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নগ্ন হস্তক্ষেপে। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদুকের তদন্ত থেমে গেলেও ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার প্রভাব পড়ে। ঐ নির্বাচনে আগের চেয়ে অর্ধেক ৫ হাজার ৯১২ ভোট পেয়ে পরাজিত হন উশ্যেপ্রু মারমা। কিন্তু উশ্যেপ্রু মারমা দমে যাওয়ার লোক না।
অত্যন্ত চতুর ও সুযোগ সন্ধানী উশ্যেপ্রু মারমার সামনে ধরা দেয় ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঐ নির্বাচনে জাতীয় বেইমান হিসেরে পরিচিতি শমসের-তৈমুরে তৃণমূল বিএনপির খাগড়াছড়ি আসনে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে আনেন বর্ণচোরা উশ্যেপ্রু মারমা। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছ থেকে দুই কোটি হাতিয়ে নিয়েছে এমন জনশ্রুতি রয়েছে। তবে মাত্র ৯ হাজারের মতো ভোট পেয়ে জামানত হারান উশ্যেপ্রু মারমা। তবে তার পরও বসে ছিল না উশ্যেপ্রুমারমা। এতেও দমে যাননি সুযোগ সন্ধানী উশ্যেপ্রু মারমা। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ নিজের রূপ পাল্টে ফেলেন। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার শুরু করেন উশ্যেপ্রু মারমা।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন হলেও তার মনোবাসনা পূর্ণ না হওয়া খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে চলতি বছরের ১২ নভেম্বর সাংবাদিক সম্মেলন করেন উশ্যেপ্রু মারমা। তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা এিপুরা ও পরিষদের সদস্যদের নিয়োগ বাতিল করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটান দেন। অন্যথায় জেলা পরিষদ ঘেরাও,হরতাল ও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দেন। কিন্তু এমন হুংকারে কোন ফল না আসায় আবারও দোড়ঝাপ শুরু হয় উশ্যেপ্রু মারমা।
আর হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার অংশ নেওয়া। আপাতত তিনি সফলও হয়েছেন। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বৈধতা দিতে তৃণমূল প্রার্থী হলেও এখন তিনি হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের অংশীদার। তিনি ইতিমধ্যে সদ্য গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন। গত ২৫ নভেম্বর ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে সমুন্নত রাখতে জাতীয় নাগরিক কমিটির বর্ধিতকরণের চলমান প্রক্রিয়ায় অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় নতুন সদস্য ঘোষণায় ৮ নাম্বার সদস্য হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর উশ্যেপ্রু মারমা। কোন যাদুর কাঠির সুবাদে বার বার সুযোগ নিতে পারছেন তার রহস্য জানতে উশ্যেপ্রু মারমাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। যার ফলে ধান্দাবাজ উশ্যেপ্রু মারমার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এটা সত্য জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় নিজের অতীতকে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করে দল পালটানো মানুষগুলো দৃশ্যত সফল। তবে তারা যে যাযাবর তারা তা বুঝে।আমাদের চারপাশে এমন মানুষ আছে যারা জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় নিজের অতীত ঢেকে বর্তমানকে লুপে। অতীত-বর্তমান সব তাদের, ভোগের সর্দার।