ডেস্ক রির্পোট:- চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেছেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাউজান উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিজয় মেলা আয়োজন নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। রাউজান কলেজ মাঠে মাসব্যাপী বিজয় মেলা ঘিরে বিএনপি’র দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, চার্জশিট হয়েছে। আমরা বিজয় মেলা নিয়ে কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক তা কামনা করি না। দাঙ্গা–হাঙ্গামা করে মেলা করার প্রয়োজন নেই। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কাজীর দেউড়ি এলাকার সার্কিট হাউস সংলগ্ন পুরাতন শিশু পার্কের পরিত্যক্ত মাঠে আগামীকাল (আজ) ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় দিন ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুধুমাত্র আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন এক দিনব্যাপী বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হবে। কোনভাবেই এক দিনের বেশী বিজয় মেলা হবে না এবং আর কোন মেলার অনুমতিও দেয়া হবে না।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন শুধুমাত্র তোপধ্বনি, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় সংগীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সালাম গ্রহণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। গতকাল নগরীর সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইন–শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন।
মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গত মাসের খাতওয়ারী অপরাধ চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সৈয়দ মাহবুবুল হক। জেলা প্রশাসক বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশাকে নিবন্ধের আওতায় নিয়ে আসা, রাস্তা দখল করে হাট–বাজার স্থাপন না করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, নারী ও শিশু নির্যাতন, রেল, নৌ ও সড়ক পথে মাদক পাচার রোধ, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, যানজট এবং বন্য হাতির উপদ্রব থেকে জানমাল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় সিস্টেমে টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে উভয় পাশে যানজট লেগে থাকে। পাশাপাশি নির্দেশনা না মেনে টোল প্লজা লাগোয়া ফুটপাত দিয়ে অবৈধ ব্যাটারি রিকশা ও ভ্যানগাড়ি পারাপারের কারণে সেতুতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ আন্তরিক হলেও পরিবহন চালকদের অসহযোগিতার কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। টোল প্লাজা লাগোয়া উভয় পাশের ফুটপাতের মাঝখানে দুটি পিলার স্থাপন করে দিলে অবৈধ ব্যাটারি রিকশা ও ভ্যানগাড়ি পারাপার হতে পারবে না। এ জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সভায় জেলা পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান বলেন, জেলার আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। সামপ্রতিক সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলার খামার থেকে বেশ কিছু গরু চুরি হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে চাঁদপুর থেকে চোরাইকৃত ১৪টি গরু উদ্ধারসহ চোর চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে তাদেরকে বিভিন্ন থানা এলাকার গরু চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কোন জিনিস চুরি–ডাকাতির পর মালামাল উদ্ধার ও আইন–শৃঙ্খলার অবনতি হলে অপরাধীদের গ্রেফতার করা পুলিশের দায়িত্ব। থানা পুলিশ আইনগত সাপোর্ট না দিলে, কারও সাথে দুর্ব্যবহার কিংবা অসহযোগিতা করলে সরাসরি এসপিকে জানাবেন।
বিজয় মেলা প্রসঙ্গে এসপি বলেন, মেলায় চাঁদাবাজি, মাদক, ইভটিজিং, জুয়া খেলা ও কোন ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপ করতে দেয়া হবে না। মেলাকে ঘিরে কোন ধরণের আইন–শৃঙ্খলার অবনতি দেখা দিলে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে ১৪৪ ধারা জারি করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সভায় ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খান বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে মারা গেছে ১৬ জন, তন্মধ্যে ১৩ জন চট্টগ্রাম জেলার ও বাকী ৩ জন অন্যান্য জেলা থেকে এসে চমেক হাসপাতালে চিকিৎিসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। গত জানুয়ারি থেকে চলতি ৯ ডিসেম্বরও পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ১৩২ জন, মারা গেছে চট্টগ্রাম জেলার ২৩ জনসহ মোট ৪২ জন, তন্মধ্যে পুরুষ ১৫ জন, নারী ২৩ জন ও শিশু ৪ জন। আক্রান্তরা বর্তমানে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতাল–ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছে। সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হকের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিজি এফআই’র উপ–পরিচালক কাজী রাজীব রুবায়েত, এনএসআই’র যুগ্ম পরিচালক শাহ সুফী নুর নবী, মেট্টো এনএসআই’র উপ–পরিচালক নূর মোহাম্মদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগাজাই মারমা (রাউজান), এবিএম মশিউজ্জামান (হাটহাজারী), মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী (ফটিকছড়ি), মুঃ ইনামুল হাছান (লোহাগাড়া), মাসুমা জান্নাত (কর্ণফুলী), মাহমুদুল হাসান (রাঙ্গুনিয়া), মাহফুজা জেরিন (মীরসরাই), রিগ্যান চাকমা (সন্দ্বীপ), কে এম রফিকুল ইসলাম (সীতাকুণ্ড), আলাউদ্দিন ভূইয়া জনী (পটিয়া), রাজীব হোসেন (চন্দনাইশ), হিমাদ্রী খীসা (বোয়ালখালী), জেসমিন আক্তার (বাঁশখালী), মিল্টন বিশ্বাস (সাতকানিয়া), তাহমিনা আক্তার (আনোয়ারা), মোহাম্মদ জামশেদ আলম (বাঁশখালী), আনসার–ভিডিপি’র জেলা কমান্ড্যান্ট (উপ–পরিচালক) মো. আবু সোলাইমান, কোস্টগার্ড প্রতিনিধি কর্নেল আবরার, বিজিবি’র নায়েক সুবেদার আশরাফুল আলম, র্যাব–৭ এর সিও পলাশ সাহা, রামগড় ব্যাটালিয়ান ৪৩ বিজিবি’র প্রতিনিধি সুবেদার মো. মশিউর রহমান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক হুমায়ুন কবির খোন্দকার, জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক আতিয়া চৌধুরী, সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন, বিআরটি’এর সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী, ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার, সওজ’র উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দিন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ইউসুফ মিয়া, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী, চিটাগাং চেম্বারের যুগ্ম সচিব নুরুল আবছার চৌধুরী প্রমূখ। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রতিনিধি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।