বান্দরবানে ৫০ একর জমির মালিক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সুরেন্দ্র ত্রিপুরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৯২ দেখা হয়েছে

বদলি-বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে সম্পদের এই পাহাড় গড়েছেন
সম্পত্তির তালিকা জমা দেওয়ার পর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা: জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা
পুকুর, বাগানসহ রয়েছেন নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ ও স্বর্ণালংকার

বান্দরবান:- বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী সুরেন্দ্র ত্রিপুরা। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও তাঁর নামে-বেনামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ ও স্বর্ণালংকার। শুধু জমিই কিনেছেন ৫০ একরের বেশি। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক বদলি-বাণিজ্য, স্লিপ ও বিদ্যালয় সংস্কার প্রকল্পের টাকা লুটসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের এই পাহাড় গড়েছেন সুরেন্দ্র।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নের জুমিয়ার পরিবারের ছেলে সুরেন্দ্র ত্রিপুরা। ২০১০ সালের ১১ আগস্ট ১৬তম স্কেলে থানচি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ পান তিনি। চাকরিজীবনের ১৪ বছরই কাটে থানচিতে। সেখানে থাকাকালে টাকার বিনিময়ে বদলি-বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন সুরেন্দ্র। অবৈধ পথে কয়েক কোটি টাকার মালিক হন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্তে এসব অভিযোগের প্রমাণ মিললে গত ১ এপ্রিল তাঁকে আলীকদমে বদলি করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, চাকরির শুরুর দিকে কোনোরকম দিনাতিপাত করলেও কয়েক বছরেই ব্যাপক পরিবর্তন হয় সুরেন্দ্র ত্রিপুরার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানচি সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কোয়াইক্ষ্যং মৌজার নকতোহাপাড়ায় ৫ একর, সাধু যোশেফপাড়ায় ৩ একর ও একটি পুকুর, মরিয়নপাড়ায় ২০ শতক, শচিনবাড়ির রাস্তার পাশে ৫০ শতকের একটি পুকুর এবং সদর ইউনিয়নের থানচি লিক্রি সড়কের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শিদুই ম্রোর কাছ থেকে ৫ একর, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুনলাই ম্রোর থেকে ৫ একর ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাংয়া ম্রো থেকে ৫ একর এবং রেইংচং ম্রো থেকে ৫ একর জমি ক্রয় করেন সুরেন্দ্র। এ ছাড়া তিন্দু ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্দমুখে ৫ একর ও রেমাক্রি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট মদকের রুনসাহ্রাপাড়া ও ক্যমং হেডম্যানপাড়ায় সেগুনবাগানসহ ৩০ একর জমিসহ মোট ৫০ একরের বেশি জমি কিনেছেন তিনি। এসব জমির বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া রয়েছে স্বর্ণালংকার ও টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা হাদিজন ত্রিপুরা বলেন, টাকার জোর হওয়ার পর তাঁর দাপট বেড়েছে। তিনি থানচিতে থাকাকালে বিভিন্ন অসামাজিক কাজেও লিপ্ত ছিলেন।

কোয়াইক্ষ্যং মৌজার মাংসার হেডম্যানের এক নিকটাত্মীয় জানান, কোয়াইক্ষ্যং মৌজায় ম্রো সম্প্রদায় থেকে বিভিন্ন ফলদ বাগানসহ প্রায় ৩০ একরের মতো জমি কিনেছেন সুরেন্দ্র ত্রিপুরা।

থানচি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন বলেন, ‘১৫ বছর চাকরি করে ৫০ হাজার টাকা জমানো সম্ভব হয়নি। সুরেন্দ্র কীভাবে এত টাকা-সম্পদের মালিক হলো আমার বোধগম্য নয়।’

আলীকদম প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী সুরেন্দ্র ত্রিপুরার মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি বারবার সংযোগবিচ্ছিন্ন করে দেন। খুদে বার্তারও উত্তর দেননি। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাই না। আপনি সরেজমিনে আসেন। আপনাকে বন্ধু হিসেবে সব ঘুরে দেখাব।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল বলেন, ‘আমি যেহেতু নতুন এসেছি, তাই এখনো কিছু জানা নেই। তবে সুরেন্দ্র ত্রিপুরা এখনো তাঁর সম্পদের তালিকা জমা দেননি। জমা দেওয়ার পর খোঁজ নিয়ে আমি অবশ্যই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব।’আজকের পত্রিকা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions