সেই পাক জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে যা এলো

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৪ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামে একটি জাহাজ। এটিই প্রথম সেখান থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজ। আর এই জাহাজ আসার পর থেকে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। একইসঙ্গে সেই জাহাজে কি আনা হয়েছে সেটা নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে গুজব। এরমধ্যে সেই আলোচিত জাহাজে কি এসেছে তা জানা গেছে কয়েকটি সূত্রে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগে জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার নামানো হয় বন্দরে। এরমধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ একক কনটেইনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে ৭৩ একক কনটেইনার। এরমধ্যে পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া কনটেইনারে রয়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ৬ হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা কনটেইনারে রয়েছে খেজুর, জিপসাম, পুরানো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন ইত্যাদি পণ্য। শুধু একটি কনটেইনারে এসেছে হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন। আরব আমিরাতের ট্রুবেল মার্কেটিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি থেকে এই পণ্য এনেছে ঢাকার ডিপ্লোমেটিক ওয়্যার হাউস সাবির ট্রেডার্স। জানা যায়, পাকিস্তান থেকে জাহাজটিতে করে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এটি। মোট ১১৫ কনটেইনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হলো খনিজ পদার্থ ডলোমাইট। ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ কনটেইনারে। মোট ৩৫ একক কনটেইনারে আনা হয়েছে চুনাপাথর। ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে ৬ কনটেইনারে। এ ছাড়া কাঁচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাঁচ আনা হয়েছে ১০ কনটেইনারে। শতভাগ রপ্তানিমুখি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কনটেইনারে। একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এসব পণ্য আমদানি করেছে আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিনস, এক্স সিরামিকস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শিল্পের কাঁচামাল ছাড়াও পিয়াজ আনা হয়েছে ৪২ একক কনটেইনারে। এসব কনটেইনারে পিয়াজ রয়েছে ৬১১ টন। এর বাইরে ১৪ একক কনটেইনারে আলু আমদানি হয়েছে ২০৩ টন। এই দুটো পণ্য আনা হয়েছে হিমায়িত কনটেইনারে। ঢাকার হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ও চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর পিয়াজ-আলু এনেছে।
পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, এই সেবা চালুর আগে পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রথমে জাহাজে করে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের বন্দরে আনা হতো চট্টগ্রামমুখি কনটেইনার। পরে এসব বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখি ফিডার জাহাজে তা তুলে দেয়া হতো। সরাসরি সেবা চালুর পর এখন করাচি থেকে জাহাজে বোঝাই করার পর কোনো বন্দরে ওই কনটেইনার নামানোর দরকার হবে না। প্রিমিয়ার সিমেন্ট পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিরুল হক বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সমুদ্রপথে নিয়মিত রুট নিশ্চিত করা গেলে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ভিন্ন চ্যানেলে না এনে চাল, পিয়াজ, ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, এমনকি পোশাকের কাঁচামাল সরাসরি আনা গেলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ। আবার পাটসহ অনেক পণ্যের রপ্তানিও ত্বরান্বিত হবে।’ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, পানামার পতাকাবাহী এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং নামের কনটেইনার জাহাজটি দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে গত ১১ই নভেম্বর। একদিন পরই জাহাজটি চলে গেছে। জাহাজটিতে ৩২৮ বক্স কনটেইনারে ৩৭০ টিইইউএস পণ্য ছিল। পরদিন জাহাজটি ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়। জাহাজটি দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম এসেছে। চট্টগ্রাম থেকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া হয়ে আবার দুবাই যাবে। আশা করি এ রুটে জাহাজটি নিয়মিত চলবে।বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য তেমন একটা বেশি নয়। আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করার ফলে হয়তো সামনে বাড়তে পারে, এ জন্যই এই সেবা চালু হতে পারে। কনটেইনার জাহাজের সেবা প্রথমবার হলেও দুই দেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ অনিয়মিতভাবে চলাচল করছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions