ডেস্ক রির্পোট:- যুবলীগ, আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন। একটা সময়ে খুব শক্তিশালী সংগঠন ছিল। বিশেষ করে ২০০১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর এবং ১/১১ সরকারের সময়ে আন্দোলন-লড়াই সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সংগঠনটি। এরপর ‘পরিবার’ বৃত্তে জিম্মি হয়ে ধ্বংস হতে শুরু করে যুবলীগ। বিশেষ করে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর দলের জাতীয় কাউন্সিলের পর সংগঠনটি তার ঐতিহ্যগত চরিত্র হারায়। এ সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
শেখ ফজলে শামস পরশ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সংগঠনের কলকাঠি নাড়তে শুরু করেন তার স্ত্রী আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যূথী। মাইনুল হোসেন খান নিখিল সাধারণ সম্পাদক হলেও তার স্বাক্ষর করা ছাড়া তেমন ক্ষমতা ছিল না বলে প্রচার ছিল সর্বত্র। পরশ-যূথীকে খুশি করতে পারলেই মিলত সংগঠনের পদ-পদবি। ‘ম্যাডাম’ যূথী থেকে হয়ে ওঠেন যুবলীগের শাসক যূথী। তাকে টাকার জোগান না দিলে কাউকে নিস্তার দিতেন না। নিজের অনুসারীদের নিয়ে গড়েন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে জেলা-উপজেলায় কমিটি বিক্রি হয়েছে। পরশ-যূথী দম্পতির কীর্তিতে দৈত্য সংগঠনে পরিণত হয় যুবলীগ। যুবলীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে যূথী হতে চেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। যূথীর বিতর্কিত রাজনৈতিক কর্মকান্ড ২০২৪-২৫ সালের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে চাঞ্চল্যকর পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে তিনি ভয়ভীতি ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জয়লাভের চেষ্টা করেন। তার নির্দেশে যুবলীগের কর্মীরা অস্ত্রসহ নির্বাচনি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে হামলা চালায়, যা আদালত প্রাঙ্গণে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পরশ-যূথীর চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং অনেক জেলা নেতারা স্থানীয় চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে জড়িয়েছেন। চাঁদাবাজি-টেন্ডারের বড় অংশের ভাগ পেতেন যূথী। টাকার নেশায় সংগঠনকে ধ্বংস করে দিয়েছেন যূথী। যূথীর নেতৃত্বে যুবলীগের নেতারা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল। যা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য চরম বিব্রতকর। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চরম বিরক্ত হয়েছিলেন। যূথীকেসহ আইন অঙ্গনে যারা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। যূথীকে ধরতে পরশের বাসায় অভিযানও পরিচালনা করে ডিবি পুলিশ।
যুবলীগের একাধিক নেতা জানান, পরশ-যূথী যুবলীগকে টাকা বানানোর মেশিন হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে অন্যতম সংগঠন যুবলীগ হলেও পরশ-নিখিল দায়িত্বে আসার পর এটা সবচেয়ে দুর্বল সংগঠনে পরিণত হয়। কারণ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ‘কোটা’ সিস্টেম চালু করা হয়। সাবেক ছাত্রনেতা, ত্যাগী-পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে হাইব্রিডরা পদ নিয়েছেন। সবকিছু হয়েছে পরশ-যূথীর কারণে। যুবলীগ সাংগঠনিক কাজ বাদ দিয়ে লোক দেখানো মানবিক কর্মকান্ডের আড়ালে আসলে সংগঠনটিকে শেষ করে দেওয়া হয়।
যুবলীগের সাবেক ও বর্তমান কমিটির অনেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যুবলীগ ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ সংগঠন। সাবেক ছাত্রনেতারা এতে ঠাঁই পেতেন। কিন্তু ২০১৯ সালে সম্মেলনের পর আইনজীবী কোটা, পরিবার কোটা, আত্মীয় কোটা ও ‘টাকার’ কোটায় নেতা হন অনেকে। যে কারণে রাজপথের যুবলীগ হয়ে পড়ে লিমিটেড কোম্পানিতে। টাকা দিয়ে যারা নেতা হয়েছিলেন তারাও নানা অপকর্ম করে টাকা কামিয়েছেন। সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজি করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারটি জেলা যুবলীগের একাধিক নেতা জানান, যুবলীগ চেয়ারম্যান ফজলে শামস পরশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে আগে যূথীর অনুমতি নিতে হতো। এটা ছিল যুবলীগে অলিখিত নিয়ম। এ ছাড়াও যুবলীগের নেতারা যখন যে জেলায় যেতেন সে জেলার সব পর্যায়ের নেতাদের ‘প্রটোকল’ দিতে হতো। কেউ কোনো কারণে না এলে পারলে তাকে ফোন করে গালিগালাজ করা হতো।
জানা গেছে, পাবনার মেয়ে অ্যাডভোকেট যূথীর স্থানীয়ভাবে তেমন কোনো পরিচিতি নেই। তার বাবা অধ্যাপক আবু সাঈদেরও কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে যূথী রাজধানীতে বসবাস শুরু করেন। দ্বিতীয় বিয়ে করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে। পরশ চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই আইন অঙ্গনসহ সর্বত্র যূথীর প্রভাব বেড়ে যায়। যুবলীগের কমিটি গঠন, সংগঠন নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন