অন্তর্বর্তী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে পার্বত্য উপদেষ্টার ঘনিষ্ট আত্মীয় ও আওয়ামীলীগের নেতারা,জনমনে ক্ষোভ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৯৬ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- অন্তর্বর্তী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে পার্বত্য উপদেষ্টার ঘনিষ্ট আত্মীয় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। যাদের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন পার্বত্য উপদেষ্টার একান্ত সহকারী ও উপদেষ্টার সাথে বিগত সময়ে চাকুরী করা ইউএনডিপির সহকর্মী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহকর্মীর মা। পাশাপাশি জনগণের গ্রহণযোগ্য, বিশিষ্টজন ও বহুল পরিচিত হিসাবে যাদের নাম আলোচনা-প্রস্তাবনায় ছিল, পুনর্গঠিত পরিষদে তাদের কেউ নেই। বিপরীতে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা কেউ আলোচনা-প্রস্তাবনায় ছিলেন না। কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগ সদস্য জনগণের কাছে অপরিচিত,অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত। গুরুত্বপূর্ন চার উপজেলা থেকে কোনো প্রতিনিধি না নিয়ে, সে সব উপজেলার শূন্য স্থান সদর থেকে পূরণ করে যে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে তা জনগণের কাছে কখনো গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদে মনোনীত রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা হলেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকার মনোনীত সাবেক অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদের সদস্য ও রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ নেতার বড় ভাই লাল ছোয়াক পাংখোয়ার স্ত্রী,রয়েছে তারই ভাতিজা ড্যানিয়েল লাল মুয়ান সাং পাংখোয়া।

এছাড়াও রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা ও প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সাবেক কর্মস্থলের(ইউএনডিপি) সহকর্মী। বৈশালী চাকমাও সুপ্রদীপ চাকমার নিকট আত্বীয় এবং প্রতিবেশী। সাগরিকা রোয়াজা একসময় জাতীয় পাটি করতেন পরে আওয়ামীলীগে যোগ দেন তিনিও উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সাবেক কর্মস্থলের (পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড) এর সহকর্মী ডজি ত্রিপুড়ার মা। বরুন বিকাশ দেওয়ান। সাবেক ফুটবল খেলোয়ার। বিগত ফ্যাসিস সরকারের সাংসদ দীপংকর তালুকদারের একান্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। ফ্যাসিস সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত রাঙ্গামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ দীপংকর তালুকদার তাকে জাতীয় পুরষ্কারের ও ব্যবস্থা করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটিতে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুস শুক্কুর স্টেডিয়ামকে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের নাম কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই। এখানে বেশ দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছিলো। ক্যসিংমং মারমা কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম মৌজার হেডম্যান। তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রঞ্জাপন হওয়ার পর এলাকায় প্রচার হয়েছে তিনি কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য অংশু সাইন চৌধুরীর তদবিরে সদস্য পদে মনোনীত হয়েছেন। নারী সদস্য নাইউ প্রু মারমা রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের নেতা বাচ্চু মং মারমার স্ত্রী। লুৎফুন্নেসা বেগম হলো বিগত ফ্যাসিস সরকারের সাবেক বন ও পরিবেশ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.হাসান মাহমুদের পারিবারিক এনজিও সুখী বাংলা ফাউন্ডেশনের পাটনার সংস্থা পর্বত মানব উন্নয়ন সংস্থা-পাড়ার নির্বাহী পরিচালক আব্বাস উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। বিগত সময়ে তার কথিত এনজিও পাড়ার মাধ্যমে জলবায়ু ফান্ডের কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করার অভিযোগ।

এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে সংবাদ প্রচার হয়েছে। আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী রাঙ্গামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি ও রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর বোনের দেবর। তাদের পুরো পরিবার আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত। সেই সুবাদে আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী একবার দুদুক রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক ও হয়েছিল। নিজে সুযোগ না পেয়ে স্ত্রীকে পদ পাইয়ে দেয়। সদস্য দয়াল দাশ নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। প্রায় সময় চট্টগ্রাম শহরে থাকেন। নানিয়ারচর উপজেলা থেকে অপর সদস্য প্রনতি রঞ্জন খীসা তিনি বুড়িঘাট ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ইউপিডিএফর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। তবে বর্তমানে এলাকায় নিয়মিত থাকেন না বলে জানা গেছে। সদস্য দেব প্রসাদ দেওয়ান। তিনি বাঘাইছড়ি উপজেলার কাচালং ডিগ্রি কলেজের অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ। আগামী ডিসেম্বর মাসে ওনার অবসরত্তোর ছুটি শেষ হওয়ার কথা। তিনি সকলের নিকট স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
অপরদিকে সদস্য মিনহাজ মুরশিদ লংগদু উপজেলার বাসিন্দা হলেও ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্টানে চাকুরী করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা পড়া কালীন সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক ইনানের রুমমেট ছিলো এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। ইনানের সাথে তার কর্মকান্ডের ছবি ফেইসবুকে সয়লাব আছে। জনশ্রুতি ছিলো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকীয় পদের জন্য মনোনীত ছিলো। কিন্ত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস সরকার পতনের পর সুযোগ বুঝে ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে মিছিল মিটিং এ অংশ গ্রহন করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সদস্য পরিচয়ে জেলা পরিষদের সদস্য পদ ভাগিয়ে নেন। অপরদিকে হাবিবে আজম পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। বাঙ্গালী ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি করলেও তিনি ফ্যাসিস সরকারের সাবেক সাংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের পৃষ্টপোষকতায় তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে তার এসব কর্মকান্ডের ছবি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ধরনের বিতর্কিত লোক নিয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পুনর্গঠিত পরিষদকে জনগণ প্রত্যাখান করেছে বলে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে অনেকের মন্তব্য লক্ষ্য করা গেছে। প্রস্তাবিত প্রার্থীদের নাম না থাকায় অনেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদও জানিয়েছেন। জনগুরুত্ব পূর্ন এসব প্রতিষ্ঠানে জনগুরুত্বহীন প্রতিনিধি নির্বাচন করায় পুরো জেলায় সাধারনের মধ্যে হতাশা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions