ডেস্ক রির্পোট:- ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির র্যালিতে লাখো জনতার সমাবেশ ঘটেছিল। বর্ণাঢ্য মিছিল নিয়ে র্যালিতে নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই র্যালি শুরু হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি র্যালির উদ্বোধন করে বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ্যের জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। দেশে-বিদেশে থেকে ষড়যন্ত্র করেও কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না।
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ র্যালির আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল মোড়-কাকরাইল মসজিদ-মৎস্য ভবন-ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-শাহবাগ-বাংলামোটর-কারওয়ান বাজার-ফার্মগেইট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, র্যালিতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছে। জুম্মার নামাজের পর থেকেই নয়াপল্টন ও তার আশপাশের এলাকার অলিগলিতে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। র্যালিতে অংশ নিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও আসেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে আসেন তারা। ঢাকা কার্যত মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়।
স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন নেতা-কর্মীরা। কামান, ধানক্ষেত, কৃষক ও কমান্ডো সাজে নেতা-কর্মীরা র্যালিতে অংশ গ্রহণ করেন। এছাড়া ঢাক-ঢোল, ট্রাক নিয়ে ও বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট পরে তারা র্যালিতে অংশ নেন। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় র্যালিপূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে র্যালিতে উদ্বোধনী বক্তব্যে রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় বিএনপির ও এর অঙ্গ-সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। আজ রাজপথে যে সমাবেশ, মিছিল তা কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়, আজকের মিছিল দেশের স্বার্থরক্ষার মিছিল। আজকের মিছিল সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং দেশ গড়ার মিছিল। নিজের অধিকার রক্ষার মিছিল। তিনি বলেন, আগেও বলেছি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না। রাজধানী ঢাকার এই রাজপথে লাখো জনতার এই মিছিল, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ৭ নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল। লাখো জনতার আজকের এই মিছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারো শহীদের স্বপ্নের একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মিছিল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি জেনে রাখুক, রাজধানীর রাজপথের আজকের এই সমাবেশ-মিছিল কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়, বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার মিছিল, নিজের ভোট প্রয়োগের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিল।
ষড়যান্ত্রের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, কখনো যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে সেজন্য প্রতিটি নাগরিকের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জনগণের ভোটের প্রতি যতক্ষণ পর্যন্ত মুখাপেক্ষী করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না। এমনকি স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশেও স্বল্প আয়ের মানুষকে বাজার সিন্ডিকেটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যদি না মানুষের সরাসরি ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাতে চাই, আমি নিজেও সতর্ক থাকতে চাই সেটি হলো গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো কিন্তু থেমে নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে, প্রশাসনে এখনো সক্রিয়। অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশে-বিদেশে, প্রশাসনে তারা চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, নিজেদেরকে সতর্ক করতে চাইলে অন্তর্বর্তী কালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এটিই আজ জনগণের চাওয়া।
র্যালি পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। র্যালিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ; দেশব্যাপী বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে স্থানীয় সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পাশাপাশি ডকুমেন্টরি (ভিডিও, স্থিরচিত্র) প্রকাশ করা হয়। এর আগে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে বিএনপি ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।