ডেস্ক রির্পোট:- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) এমবিবিএস ও বিডিএসের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ৭৫ জন শিক্ষার্থীকে ৬ মাস থেকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কলেজ ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। এছাড়া একই অপরাধে বাকি আরো ১১ জনকে মুচলেকা নিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। গত রোববার দুপুরে চমেক অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চমেক একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। যা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে।
চমেক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে গত ১১ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে চমেক কর্তৃপক্ষ। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রাবাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অবৈধভাবে কক্ষ দখল, অঙ্গীকার ভঙ্গসহ কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, মারধর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব শিক্ষার্থীর যথেচ্ছাচারী আচরণের কারণে কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসগুলোতে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন সংঘাতের কারণে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপরও তারা আরও শিক্ষার্থী নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্র রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে একক কর্তৃত্ব, গোষ্ঠীগত আধিপত্য ও ব্যক্তিগত হিরোইজম প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন নিন্দনীয় ঘটনা ঘটায়। কলেজ ক্যাম্পাস এবং ছাত্রাবাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও তারা সেটা অমান্য করে এ ধরনের কাজে লিপ্ত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চমেক অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা মারামারি–সংঘর্ষ, আধিপত্য বিস্তারসহ ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে আগেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাস সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং শৃঙ্খলা বিরোধী কাজ কখনো কাম্য হতে পারে না।
যারা বহিষ্কার হলেন————
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার আদেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দুই বছরের জন্য বহিষ্কারকৃত শিক্ষার্থীরা হলেন– এমবিবিএস ৫৯তম ব্যাচের মুশফিকুন ইসলাম, আসেফ বিন তাকি, রিয়াজুল ইসলাম জয়, ৬০তম ব্যাচের অভিজিৎ দাশ, মাহমুদুল হাসান, বিডিএস ৩০তম ব্যাচের ইমতিয়াজ আলম, সাজেদুল ইসলাম হৃদয়। এছাড়া ১ বছর ৬ মাসের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন– এমবিবিএস ৬০তম ব্যাচের মো. শামীম আহমেদ ভূঁইয়া, মো. ফয়সাল আহমেদ, ৬১ তম ব্যাচের সাইফ উল্লাহ, ৬২তম ব্যাচের জাকির হোসেন সায়াল, সৌরভ দেবনাথ, মো. নাইমুল ইসলাম, সাদ মোহাম্মদ গালিব, সাজু দাশ, ৬৩ তম ব্যাচের জাবেদুল ইসলাম, বিডিএস ২৯তম ব্যাচের পল্লব বিশ্বাস, জিয়া উদ্দিন, কনক দেবনাথ, শাওন দত্ত, ৩১ তম ব্যাচের জাহিদুল ইসলাম জিসান, ৩২ তম ব্যাচের দেবজিৎ বিশ্বাস। এক বছরের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন–এমবিবিএস ৫৮তম ব্যাচের তৌফিকুর রহমান ইয়ন, ৬০তম ব্যাচের আতাউল্লাহ বোখারী, নাঈমুল মোস্তফা আকাশ, আহসান উল্লাহ, মুকেশ রঞ্জন দে, ৬১তম ব্যাচের হাসিন শাওয়াদ রাব্বি, সুমিত চক্রবর্তী, এইচ আর মাহফুজুর রহমান, মুনান খান, মাশফি জুনায়েদ, আহসানুল করিম মাহারুস, মো. হাসান রাব্বি, এবিএম তৌহিদুল হাসান, ৬২ তম ব্যাচের মো. এনামুল হাসান সীমান্ত, এইচএম আসহাব উদ্দিন, সৌরভ বেপারি, ৬৩তম ব্যাচের হাসিবুল ইসলাম নিলয়, রজত আচার্য্য, মো. মেহেদী হাসান, প্রীতম দে অনিক, রাহুল সুশীল, জাকি আল হাসান, মো. মাহফুজুর রহমান, সৌরেন বড়ুয়া, তাফহিমুল ইসলাম, ৬৪ তম ব্যাচের শেখ রিমন হোসাইন, মো. শাহরিয়ার রহমান, মো. তাইফুল ইসলাম তামজেদ, নাফিস বিন মুক্তাদির, মো. ইয়াসীন আরাফাত আলিফ, মো. রাকিবুল ইসলাম, ৬৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাতিন আহবাব ইশমাম, বিডিএস ৩০তম ব্যাচের মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব, ৩১তম ব্যাচের মো. মাহতাব উদ্দিন রাফি, মোহাম্মদ আনিস, অর্ঘ্য সিকদার, ৩২ তম ব্যাচের জয়ন্ত নাগ তীর্থ এবং বিডিএস ৩৩তম ব্যাচের ফয়সাল আজিজ রিয়াদ। অপরদিকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন– এমবিবিএস ৬০তম ব্যাচের ফয়েজ উল্লাহ, ৬২তম ব্যাচের উৎস দে, মাহিন আহমেদ, জুলকাফাল আহমেদ শোয়েব, ৬৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পুজন সাহা, অগাস্টো দীপ নিলয়, শেখ শামীম হাসান, ৬৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৌরেন চক্রবর্তী, আর্য দেব সরকার, মো. মোস্তাফা জামিল, ৬৫তম ব্যাচের আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ওমর, বিডিএস ৩০তম ব্যাচের আল নিবরাজ বিন হোছাইন, ৩৩তম ব্যাচের মো. শাহাদাত হোসাইন এবং বিডিএস ৩৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রেয়স্কর সাহা।