ডেস্ক রির্পোট:- চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কমিশনিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে কমিশনিংয়ের (ট্রায়াল রান) কাজ চলছে। আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে এই প্রকল্পের পানি সরবরাহ শুরু হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শেষ মুহূর্তের কাজগুলো চলছে। এই প্রকল্পে ১৩০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইন রয়েছে। পাইপ লাইনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্ট চেক করা হচ্ছে।
ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের অন্যসব কাজ শেষ হলেও পশ্চিম পটিয়া কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশে ২৪ মিটার গভীরে ২৪৭ মিটার দৈর্ঘ্য একটি পাইপলাইন বসাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে ওয়াসা। একদিকে ব্রিজ–তার ওপর খালের তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন বসাতে গিয়ে দীর্ঘ জটিলতা সৃষ্টি হয়। এতে এক বছর সময় পার হয়ে যায়। অবশেষে সব জটিলতা কাটিয়ে পাইপলাইনের কাজ শেষে গত এক সপ্তাহ ধরে কমিশনিংয়ের কাজ চলছে। ট্রায়াল রান শেষে নভেম্বরের শেষের দিকে এই প্রকল্পের পানি গ্রাহকদের মাঝে সরবরাহ শুরু হবে বলে জানা গেছে। এই ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম গতকাল বলেন, ওয়াসার ভান্ডালজুড়ির পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে কমিশনিংয়ের (ট্রায়াল রান) কাজ চলছে। নভেম্বরের শেষের দিকে আমরা এই প্রকল্পের পানি সরবরাহ শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। গত সপ্তাহ থেকে কমিশনিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। পাইপ লাইনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। চলছে প্রতিটি পয়েন্ট চেকের কাজ। ভাল্বগুলো চেক করা হচ্ছে। কোথাও কোনো লিকেজ ধরা পড়ছে কিনা যাচাই করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে ১৩০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইন রয়েছে। পানি সরবরাহের আগে পুরো লাইন চেক করতে হবে। এই কাজগুলো এখন চলছে।
নভেম্বরের শেষের দিকে প্রকল্পের পানি সরবরাহ শুরু করার কথা জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, প্রথম পর্যায়ে যেসব শিল্প কারখানা আমাদের থেকে পানি নেয়ার জন্য আবেদন করেছে সেগুলোতে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি যে সব আবাসিক গ্রাহক আবেদন করেছে সেগুলোতে সরবরাহ করা হবে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া এলাকায় গড়ে ওঠা কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকো ও পটিয়া ইন্দ্রপোলের লবণ কারখানাসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলগুলোতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা। প্রকল্পের শুরুতেই চট্টগ্রাম ওয়াসা দেশী–বিদেশী এসব শিল্পজোন ও কারখানাগুলোকে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে সুপেয় পানি নেয়ার জন্য চিঠি দিলে সবকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছিল।
কিন্তু এখন প্রকল্পের কাজ শেষে সংযোগ নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হলে এখনো পর্যন্ত দুটি প্রতিষ্ঠান (সিইউএফএল এবং ড্যাপ কারখানা) ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, প্রকল্পের শুরুতেই আমরা আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ার দেশী–বিদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রকল্প থেকে পানি নেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। তখন কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, কাফকোসহ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পানি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ছোট–বড় মোট ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার। এই শিল্পাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট রয়েছে ওয়াসার। আর ২ কোটি লিটার দেয়া হবে বোয়ালখালী–পটিয়ার আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে। এখনো পর্যন্ত পটিয়ায় ৬শ’ আবাসিক গ্রাহকের সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে এবং অপরদিকে বোয়ালখালীতে ১০০টির মত আবাসিক গ্রাহকের সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংকের সাথে ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরবর্তীতে পুনরায় সমীক্ষা শেষে প্রকল্প ব্যয় সংশোধন করে তা ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকায় বর্ধিত করা হয়। এবং কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাকের সাথে নতুনভাবে চুক্তি সম্পাদনের পরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সাল থেকে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংক ৮২৫ কোটি টাকা ও অবশিষ্ট টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে দেয়া হয়েছে।আজাদী