শিরোনাম
বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে সবাই শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা

১৪ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ ‘অন্ধকার’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পেটি:- ছন্দ হারিয়েছে ১৪ দল। গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই জোটটির ‘অস্তিত্ব’ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। আচকা ক্ষমতা হারিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই ধুঁকছে। জোটের অন্য শরিক দলেও নেমে এসেছে বিপর্যয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে কোনো কোনো শরিক দলে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এই মুহূর্তে জোটের সব দলই নিজেদের রাজনৈতিক ‘সত্তা’ টিকিয়ে রাখার প্রাণপণ লড়াইয়ে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আড়াই মাস এসব দল রাজনৈতিকভাবে কার্যত বিচ্ছিন্ন ও নিষ্ক্রিয়। সব মিলিয়ে ১৪ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সময় নেই কারও।

এদিকে কয়েকটি শরিক দল চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে বিবৃতি কিংবা ঘরোয়া বৈঠক করে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ‘গণরোষের ভয়ে’ কোনো দলই নামছে না মাঠের কর্মসূচিতে। এরই মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের প্রভাবশালী দুই শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু জুলাই-আগস্টে সংঘটিত একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাবন্দি। দুর্নীতি-লুটপাটের নানা অভিযোগ ওঠায় এ দুই সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে সরকার ও দুদকের। পাশাপাশি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি হয়ে শরিক দলের শীর্ষ নেতাসহ সারাদেশের বেশির ভাগ নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এদিকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপ কিংবা মতবিনিময় সভার কোনো পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দল শরিকদের কাউকেই ডাকা হচ্ছে না। ফলে এসব দলের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারসহ আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার মনোভাব পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় ১৪ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ ‘অন্ধকার’ দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঐক্য হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট হয়। ২৩ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোটটির আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয় ওই বছরের ১৫ জুলাই থেকে। গত ১৯ বছরে নানা টানাপোড়েন ও ভাঙা-গড়ার পর ৫ আগস্টের সরকার পতনের আগ পর্যন্ত জোটের শরিক দলের সংখ্যা ছিল আওয়ামী লীগসহ ১২টি।

দায় নিতে নারাজ শরিকরা

১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ন্যাপ, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরীকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি এবং কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অন্তত ১০ শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতার প্রায় সবাই অভিন্ন কণ্ঠে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তা কীভাবে কাটিয়ে রাজনীতিতে ফেরা যায়, আপাতত সেটা নিয়েই ভাবছি। ফলে ১৪ দল আছে কী নেই, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ কোথায়! পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে কিংবা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হলে, তখনই শুধু এটা নিয়ে ভাবার সুযোগ হবে। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ছাড়া কিছু করারও নেই।

এসব নেতা মনে করেন, টানা চার মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের জোট গঠনের বিষয়টি ছিল মূলত আদর্শিক। আন্দোলনের প্রাথমিক সাফল্যের পর একসঙ্গে নির্বাচন করে ২০০৯ ও ২০১৪ সালের প্রথম দুই মেয়াদের মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থানও ছিল শরিক দলগুলোর। তবে নানা টানাপোড়েনের মুখে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে একসঙ্গে অংশ নিলেও শেষ দুই মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ তাদের ছিল না। পাশাপাশি জনজীবনের সংকটসহ নানা প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও সরকারের সঙ্গে অনেকটা দূরত্বও চলে আসছিল তাদের।

শরিক নেতারা বলছেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তার সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটসহ অতীত কর্মকাণ্ডের দায় শরিক দলগুলোর ওপর চাপানো মোটেই ঠিক হবে না। কেননা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শরিক দলগুলোর পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দেওয়া হলেও আমলে নেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে বর্তমান অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার সরকার এককভাবে দায়ী।

যেভাবে চলছে শরিকদের কার্যক্রম

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন একাধিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা একাধিক মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে আছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় দলের পলিটব্যুরোর দু’জন সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে পলিটব্যুরোর বৈঠক ও বিবৃতির মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত নিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা করার চিন্তাভাবনা চলছে।

হত্যা মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কারাগারে থাকায় এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার আসামি হয়ে আত্মগোপনে থাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে দলটি। দলটির নেতাকর্মীরা এখন চরম হতাশ। অনেকে দল ছেড়ে জাসদের অন্য অংশে যোগ দিচ্ছেন। জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির স্থায়ী সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান দল ছেড়ে বাংলাদেশ জাসদে যোগ দিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ১৪ দলীয় জোট ছেড়ে আসা শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও। এ ছাড়া জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নুরুল আখতার এবং ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি নুরুন্নবীর নেতৃত্বে উত্তরের গোটা কমিটিই আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডিতে যোগ দিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে আগস্টের মাঝামাঝি এক দফা আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামও মামলার আসামি। তবে গত আড়াই মাসে দলটির তেমন কোনো বক্তৃতা-বিবৃতি চোখে পড়েনি। তরীকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দলসহ অন্য শরিক দলের নেতারাও কমবেশি মামলার আসামি। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী কয়েক দিন এসব দল দুয়েকটি ইস্যুতে বিবৃতি দিলেও এখন সবাই কার্যত নিষ্ক্রিয়। দলগুলোর কার্যালয়গুলোতেও নেতাকর্মীর আনাগোনা নেই বললেই চলে।

১৪ দল নিয়ে প্রশ্ন

১৪ দলের শরিক দলগুলোর অধিকাংশ নেতাকর্মীর মধ্যেই এখন জোট নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ নেতা এই পরিস্থিতিতে ১৪ দলকে নিয়ে সামনে হাঁটতে আগ্রহী নন। অনেকে এই মুহূর্তে ১৪ দল থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে। বিশেষ করে দলগুলোর জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন।

শরিক দলের এসব নেতাকর্মী বলছেন, আওয়ামী লীগ এতদিন ‘একলা চলো’ নীতিতে চলেছে। সরকার পরিচালনায় জোট শরিকদের কোনো পরামর্শ নেয়নি, কোনো কথা শোনেনি। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও শরিকদের অবহেলা ও অবমূল্যায়ন এবং হেয় প্রতিপন্ন করেছে। এখন আওয়ামী লীগের অপকর্মের দায়ভার তাদের ওপর বর্তাচ্ছে। তাই ১৪ দল না ছাড়লে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions