স্ত্রীকে মদ ও ইয়াবা খাওয়ানোর পর টানেলে ঘুরতে যাবে বলে পাহাড়ে তুলে খুন!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৭২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারার পাহাড় থেকে আমেনা বেগম (৩৫) নামে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত দুই জন যুবক কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকা খাগড়াছড়ি এবং বাঘাইছড়ির বিভিন্ন এলাকায় টানা ৭২ ঘন্টার অভিযান শেষে গতকাল বুধবার তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদৌস।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং হাজী পাড়া এলাকার মোহাম্মদ সোলতান আহমেদের ছেলে জাহেদ নাবেদ (৩০) প্রকাশ মো. জাহেদ প্রকাশ নাহিদ ও আনোয়ারা উপজেলার ইরফান (৩২)।

সম্প্রতি তিন দিনের রিমান্ড শেষে আসামি নাহিদ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আদালত নং-৫ চট্টগ্রাম) এর বিচারক ফারদিন মুস্তাকিম তাসিনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুত্রে জানায়, গত ৩ অক্টোবর দুপুরে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের চায়না ইকোনমিক জোন কার্যালয়ের পাশে পরিত্যক্ত একটি ইটভাটা থেকে গৃহবধূ আমেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের ভাষ্য, শেয়াল বা কুকুর লাশের কিছু অংশ খেয়ে ফেলায় এবং মরদেহ পচে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় পিবিআইয়ের ক্রাইম সিন ইউনিটকে পরিচয় শনাক্তের ভার দেওয়া হয়।

এক দিনের মাথায় পরিচয় শনাক্তের পর পিবিআই জানিয়েছে, উদ্ধার করা মরদেহটি আমেনা বেগম নামে ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর বলুয়ার দিঘির পাড় এলাকার আবুল কালাম সওদাগর কলোনির বাসিন্দা কামাল উদ্দিনের মেয়ে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নাগেরকান্দি গ্রামে।

ওই সময় পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন বলেন, ওই তরুণীর পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ধারণা করেছিলেন আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে মরদেহটি পাহাড়ে ফেলে চলে যায়।

পরে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়ির পাহাড়ে টানা ৭২ ঘণ্টার অভিযান করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেন। এমনকি সরাসরি ঘটনায় জড়িত দুই জনকে গ্রেপ্তার করেন। পরে আসামি নাহিদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

গ্রেপ্তার আসামির দেওয়া তথ্য ও পুলিশ সূত্র আরও জানায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর খুন হওয়া গৃহবধূ আমেনার স্বামী ইয়াসির আরাফাত ফোন করে নাহিদ কে জানান সে দুবাই থেকে আসছে। পার্টি করবে। নাহিদ আগ্রাবাদে থাকেন।

পরে ইয়াসিরের সাথে তার আরেক বন্ধু ইরফানসহ আগ্রাবাদে আসে। সেখান থেকে ৩০ তারিখ রাতে সিএনজি করে আনোয়ারায় ইরফানের বাড়িত যান। তারপর তারা সেখানে ইয়াবা ও মদ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

পর দিন পহেলা অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ইয়াসিরের স্ত্রী ভিকটিম আমেনা তাকে ফোন করেন।

তার একটু পর ইয়াসিন ও ইরফান আরেক বন্ধুর গাড়িতে করে নগরীর কালামিয়া বাজার যান। তখন নাহিদ ইরফানের বাড়িতেই ছিলেন। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে আমেনাসহ দুজন আবার ইরফানের বাসায় ফিরে যান।

পরে চার জন মিলে এক সাথে ইয়াবা ও মদ সেবন করেন। রাত ৩ টার দিকে তারা প্ল্যান করেন গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হবেন। গাড়ি নিয়ে বের হয়ে তারা প্ল্যান করেন টানেলে ঘুরতে যাবেন। পরে প্ল্যান পরিবর্তন করে সিদ্ধান্ত নেন পাহাড়ে বসে মদ খাবে। ইরফান তাদের আনোয়ারার একটি পাহাড়ে নিয়ে যান। সেখানে যাবার পর ইয়াসিন ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।

ঝগড়ার এক পর্যায়ে হঠাৎ ইরফান আমেনার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। পরে ইয়াসিন কোমর থেকে একটি ছুরি বের করে আমেনার পেটে ডুকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আমেনার মৃত্যু হলে তিনজনে মিলে নিহতের কাপড় কেটে নালার মধ্যে লাশ ফেলে দেয়। তারপর সেখান থেকে তিনজন ইয়াসিরের খালাতো ভাইয়ের বাসায় যায়। তারপর যে যার মতো চলে যান। সঙ্গত কারণে ঘটনায় জড়িত কয়েক জনের নাম স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

তবে পুলিশ সুত্রে আরও জানায়, স্ত্রীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের চায়না ইকোনমিক জোন পাহাড় রেখে গত ৩ অক্টোবর ইয়াসির পুনরায় দুবাই চলে যান।

যদিও দুবাই প্রবাসী ইয়াসিন আরাফাতের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সেই সংসারে একটি সন্তান রয়েছে। তার আগের সংসারেও দুই সন্তান ছিল। কিন্তু ইয়াসিনের পরিবার আমেনাকে মেনে নেয়নি। এ কারণে স্ত্রীকে তিনি নগরের বাকলিয়া তক্তারপুল এলাকায় ভাড়া বাসায় রাখতেন।

নিহত আমেনার পিতা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে আনোয়ারায় নিয়ে যায় তার স্বামী। সেখানেই আমার মেয়েকে তার স্বামী খুন করেছে।’

এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, ‘আমরাও জেনেছি পিবিআই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তার করতে পিবিআই কাজ করছেন। আমরাও চেষ্টা করছি।’

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions