চলমান অস্থিরতায় পোশাকশিল্পের ক্ষতি ৪০ কোটি ডলার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ৫ আগস্টের পর গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতার কারণে আনুমানিক ৪০০ মিলিয়ন বা ৪০ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
গতকাল শনিবার উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এখনো অস্থিরতার কারণে গার্মেন্ট খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি নিরূপণ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান। তবে আমাদের কাছে আসা প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ৪০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, যা আরো বাড়তে পারে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের শিল্প ভালো নেই। বিশ্বে পোশাক আমদানি কমে আসছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি পরিমাণের দিক থেকে বেড়েছে ১.৫ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশ থেকে কমে গেছে ৩.৮ শতাংশ।

কিন্তু চীন থেকে বেড়েছে ৩.৬ শতাংশ। একইভাবে ভিয়েতনাম থেকে বেড়েছে ৫.২ শতাংশ, ভারত থেকে বেড়েছে ৭.৬ শতাংশ এবং কম্বোডিয়া থেকে বেড়েছে ৭.৭ শতাংশ। ইউরোপে জানুয়ারি-জুলাই সময়ে মোট আমদানি বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ থেকে বেড়েছে মাত্র ২.৮ শতাংশ।

কিন্তু চীন থেকে বেড়েছে ৬.৪ শতাংশ, ভারত থেকে বেড়েছে ৫.১৮ শতাংশ, কম্বোডিয়া থেকে বেড়েছে ১৮.৩৫ শতাংশ, ভিয়েতনাম থেকে বেড়েছে ১২.৬১ শতাংশ এবং পাকিস্তান থেকে বেড়েছে ১৪.৪১ শতাংশ। তুলনামূলক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির বিচারে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৩৪ শতাংশ।

আর ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৫৭ শতাংশ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় প্রবৃদ্ধিতে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি, যেটি এসব দেশে রপ্তানি আদেশ শিফট হয়ে যাওয়াকে ইঙ্গিত করে।’


রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নির্দিষ্ট কিছু শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতার কারণে শুধু সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের ২৫০-৩০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
এলডিসি উত্তরণের কথা বলে পোশাকশিল্পের নগদ সহায়তার হার কমিয়ে আনা হয়েছে। এটি শিল্পে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি ও বিপর্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।

এলডিসি উত্তরণের পর অনেক মধ্যম আয়ের দেশ তাদের শিল্পের জন্য নামে-বেনামে প্রণোদনা দিয়ে আসছে, যার অনেক উদাহরণ আমাদের কাছে আছে। অতএব, সামগ্রিক অর্থনীতিতে পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রণোদনা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’

গত দুই মাসে পোশাকশিল্পে দীর্ঘায়িত অস্থিরতায় অনেক মাসুল দিতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হোক। যারা শিল্প ও অর্থনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, তাদের কঠিন আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আমরা বরাবরই আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সেই অবস্থান থেকেই আমরা শত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছি। এর পরও যদি পোশাক খাতে নৈরাজ্য চলে বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তাহলে তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবাইকেই নিতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনা এবং পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোর জন্য বিশেষ নীতি সহায়তা চেয়েছে বিজিএমইএ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নির্দিষ্ট কিছু শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতার কারণে অনেক কারখানা আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। ফলে বিজিএমইএ সহজ শর্তে ঋণ চেয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দেয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

এ ছাড়া শ্রম অসন্তোষের কারণে আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর মধ্যে ৩৯টি কারখানা সেপ্টেম্বর মাসে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার মতো সক্ষম ছিল না। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এসব কারখানাকে সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions