নিষ্ক্রিয় পুলিশ, আরামে আওয়ামী দস্যুরা!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পূজায় সম্প্রীতির গান গেয়ে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার ‘অপরাধে’ মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় দুই শিল্পীকে। আবার নিজেদের মধ্যে বিরোধের জেরে একজনকে নেচে গেয়ে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মূল হোতাসহ তিন আসামিকে পাকড়াও করা হয় অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে। অথচ জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি বর্ষণকারীদের ধরা হচ্ছে না। পুলিশ বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে ছাত্র-জনতার এসব খুনি ও তাদের মদতদাতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের দস্যুরা অধরাই থেকে গেছে। অথচ রক্তস্নাত বিপ্লবে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূস শুরু থেকেই ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের খুনিদের বিচার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আসছেন। কিন্তু সরকারের এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই।

নজিরবিহীন এক গণঅভ্যুত্থানের মুখে মাফিয়া গডমাদার হাসিনা তার প্রভুদের আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রায় আড়াই মাস পার হলেও ফ্যাসিবাদী পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, মেয়র, এমপিরা ধরা পড়েনি। ভোট ছাড়াই সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদ দখলে নিয়ে সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি, দখলবাজিতে জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তোলা আওয়ামী জাহেলিয়াতের কুশীলবরাও বেশ আরামেই আছেন। বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের প্রতিটি এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য গড়ে উঠে। এসব দস্যুদের কাছে জিম্মি ছিল সাধারণ মানুষ।
অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিবাদের দোসর কিছু পুলিশ কর্মকর্তার কারণেই নির্বিচারে গুম, খুন ও লুটপাটে জড়িত এসব আওয়ামী দস্যুরা গ্রেফতার এড়িয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করে যাচ্ছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতারা একের পর এক ধরা পড়লেও চট্টগ্রামে তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিগত আড়াই মাসে মাত্র দুই জন সাবেক এমপি ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে আবার একজনকে ধরে দিয়েছে বিজিবির সদস্যরা। পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগীদের ধরতে কোনো অভিযান না থাকায় তারা নিরাপদেই রয়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে তারা যেকোনো সময় সংঘবদ্ধ হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
ছাত্র জনতার বিজয়কে সুসংহত করতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের গ্রেফতার এবং প্রতিটি খুনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের পরিবারের সদস্যদেরও চাওয়া খুনিদের বিচার। অথচ চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসন হাঁটছে তার সম্পূর্ণ উল্টো পথে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ ১১ জন শহীদ হয়েছেন। প্রতিটি খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিন্তু এসব মামলার আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছে না। পুলিশের সামনেই আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে গুলি করে ছাত্রদের হত্যা করেছে। মুরাদপুর, বহদ্দারহাটে ও নিউমার্কেট এলাকায় সংঘটিত এসব খুনের ঘটনায় সাক্ষী পুলিশের কর্মকর্তারা। তাদের সামনেই আওয়ামী লীগের নেতাদের উপস্থিতিতে এসব গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। গুলি বর্ষণকারী ছাত্র লীগ, যুবলীগ ক্যাডারদের ছবিসহ তাদের বিস্তারিত পরিচয়ও দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে শুরু থেকেই মাঠে ছিল পতিত স্বৈরাচারী সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর ক্যাডাররা। তাদেরকে অস্ত্র গোলাবারুদ দিয়ে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নগর কমিটির শীর্ষ নেতারা। কয়েক জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরও ছিল প্রকাশ্যে। সবকটি হত্যা মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। অথচ কেউ এখনো ধরা পড়েনি। র্যাবের অভিযানে প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণকারী কয়েক জন গ্রেফতার হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ছাত্র আন্দোলনে খুনের অস্ত্র জোগানদাতা যুবলীগ ক্যাডার হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নুরুল আজিম রনিসহ সবাই এখনো অধরা।
ফ্যাসিবাদী শাসনে হাসিনার সহযোগী সাবেক মন্ত্রী, মেয়র এমপি কেউ ধরা পড়ছে না। শেখ হাসিনার গুম খুনের শাসন টিকিয়ে রাখতে শেষ সময় পর্যন্ত যারা গণ ভবনে বসে ছাত্র-জনতার উপর ক্র্যাক ডাউন চালিয়ে যাওয়ার ইন্ধন দিয়ে আসছিলেন তাদের অন্যতম ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর ভান্ডারি। ফ্যাসিবাদের এই দোসর এখনো ধরা পড়েনি। চট্টগ্রামে আওয়ামী দুঃশাসনে সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত হাছান মাহমুদ, মহিবুল হাসান নওফেল, সাইফুজ্জামন জাবেদ ও শামসুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু শামসুকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিনা ভোটের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় সব এমপি ছিলেন এলাকায় এক একজন গডফাদার। তাদেরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে গুম, খুন, দখলবাজি, লুটপাট। পুলিশ বাহিনী ছিল এসব আওয়ামী গডফাদারদের লাঠিয়াল। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছে। গায়েবি মামলায় আজগুবি অভিযোগে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে নেতা কর্মীদের। কোন ঘটনা ছাড়াই মামলা হয়েছে, নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে এসব মামলায় তাদের স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিদায় হয়েছে, কিন্তু পুলিশে এখনো তাদের ভুত থেকে গেছে। আর এই কারণেই গুম, খুন লুটপাটের আসামি হয়েও গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হচ্ছেন হাসিনার সহযোগীরা। সরকার বদলের পর পুলিশের শীর্ষ পদে রদবদল করা হয়েছে। চট্টগ্রামে পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি ও পুলিশ সুপারসহ উপরের স্তরে নতুনদের বসানো হয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে আগের সদস্যরা রয়ে গেছেন। ফলে পুলিশ বাহিনী সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া কর্মসূচির সাথে তাল মেলাতে পারছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পুলিশের কর্মকর্তারা দাবি করেন, পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি এমন দাবি করে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে দুই মাসের তৎপরতার একটি ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। তবে সেখানে ছাত্র জনতার কয়জন খুনিকে গ্রেফতার এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কয়টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয় তার কোন তথ্য নেই। বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে জনগণকে জিম্মী করে রাখা কয়জন গডফাদারকে পাকড়াও করা হয়েছে তেমন কোনো তথ্যও নেই। চট্টগ্রাম নগরীর ৪১জন কাউন্সিলরের মধ্যে বেশির ভাগই চিহ্নিত অপরাধী ও অপরাধীদের গডফাদার। তাদের একজনকেও ধরতে পারেনি পুলিশ। এই নগরীতে পুলিশের সংখ্যা ছয় হাজারেরও বেশি। ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions