শিরোনাম

কার্টুনে ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- নানা রঙের মুদ্রার স্তূপ। ঝিলিক দিচ্ছে স্বর্ণালংকার। আছে ভারী অস্ত্রও। সম্পদের স্তূপের একেবারে চূড়ায় বসে আছে একটি শিশু।
দুই হাত দুই দিকে মেলে ধরে বলছে, ‘আমি নিষ্পাপ’। পাশে রাখা ফিডার থেকে মুখে দেওয়া দুধ গড়িয়ে পড়ছে থুতনিতে। আলাভোলা শিশুটির চেহারা সবার চেনা। পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের নিষ্পাপ শিশু সাজার ইঙ্গিতময় এই চিত্রটি এঁকেছেন কার্টুনিস্ট অপু।

আওয়ামী লীগ সরকারের অনাচার-লুটপাট নিয়ে আঁকা এমন কয়েক শ কার্টুন নিয়ে রাজধানীতে চলছে একটি বিশেষ প্রদর্শনী। ‘স্বৈরাচারের ১৬ বছর’ শীর্ষক এই কার্টুন প্রদর্শনী চলছে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে। এতে জায়গা পেয়েছে বিভিন্ন সময় আঁকা আড়াই শর বেশি কার্টুন। গত ৮ অক্টোবর সকালে এর উদ্বোধন করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
প্রদর্শনীটির যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট ফোরাম ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর।

২০১২ সালে আঁকা আসিফুল হুদার একটি কার্টুনে দেখা যায়, একজন সাংবাদিক দৌড়ে পালাচ্ছেন। তাঁকে তাড়া করছেন মুজিব কোট পরা অস্ত্রধারী এক ব্যক্তি ও একজন পুলিশ সদস্য। এমন অবস্থায় তাড়া খাওয়া সাংবাদিকের সামনে রয়েছে তিনটি পথ। হাসপাতাল, জেলখানা আর গোরস্থান।

একই কার্টুনিস্টের ২০১৩ সালে আঁকা একটি চিত্রে দেখা যায়, বক্তব্য দিচ্ছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দরজার আড়ালে থেকে উঁকি দিয়ে শেখ হাসিনা এনবিআর কর্মকর্তাকে বলছেন, ‘বিদেশে লেকচার দিয়ে আর বই লিখে অনেক ডলার কামিয়েছেন…বিগ ক্রাইম, টেক অ্যাকশন।’ হুদার ২০১৭ সালে আঁকা আরেকটি কার্টুনে দেখা যায়, মুখে তালা মারা এক ব্যক্তিকে সাংবাদিক প্রশ্ন করছেন, ‘কারা আপনাকে গুম করেছিল বলুন।’ পাশে বসে থাকা এক নারী উত্তরে বলছেন, ‘মুখ খুলবে কী করে?!… চাবি তো উনাদের কাছে।’
আরো পড়ুন
যে মেলায় খোঁজ মেলে জীবনসঙ্গীর

যে মেলায় খোঁজ মেলে জীবনসঙ্গীর

প্রদর্শনীতে আসিফুল হুদা, মেহেদী হক, আমিনুল ইসলাম, অপু, মোরশেদ মিশু, খলিল রহমান, জাহিদ হাসান বেনু, বিপ্লব, কে মাহমুদ, তন্ময় ও ইব্রাহীম মণ্ডলের ২৬০টি কার্টুন স্থান পেয়েছে। এসব কার্টুনে পতিত শেখ হাসিনা সরকারের অর্থনীতি, শেয়ারবাজার, উন্নয়ন, গণতন্ত্রের হালচাল, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, গুম-খুন, উচ্চ আদালতের অবস্থা, ভারতের দাদাগিরি, দুর্নীতিবাজ নেতা, আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যঙ্গ করা হয়েছে।

মেহেদী হকের একটি কার্টুনে দেখা গেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশীদকে। একটি বাটিতে খাবার নিয়ে হারুন ইংরেজিতে জানতে চাইছেন, ‘হাংরি?’। বাটিতে লেখা রয়েছে ‘ম্যাজিক রেসিপি’। মেহেদী হকের আরেকটি কার্টুনে বকের মতো উড়তে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। হাস্যরত বকদেহী সাকিবের গলা অবধি টাকা আর টাকা, এরই মাঝে তিনি বলছেন, ‘তারপর? দেশের জন্য আপনি কী করছেন?’

প্রদর্শনীর আয়োজক বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট ফোরামের সভাপতি কার্টুনিস্ট ইব্রাহীম মণ্ডল মনে করেন, কার্টুন শুধু হাসির খোরাক নয়, অপশক্তির মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যমও। কার্টুনকে স্বয়ং হিটলারও ভয় পেতেন। যেসব জায়গায় স্বৈরাচারের আবির্ভাব ঘটে, সেখানে কার্টুন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর স্বৈরাচার অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সফল করেছে। আমরা মুক্ত হয়েছি। এই স্বৈরাচারের হাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে। পৃথিবীতে আরো স্বৈরাচার এসেছে, কিন্তু এমন নির্মম নির্যাতন আর কোথাও হয়নি। প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছে। কার্টুনিস্টরাও ১৬ বছর ধরে কার্টুন এঁকে ব্যঙ্গ ও প্রতিবাদ করেছেন।’

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions