‌‘মার্কিন-ভারতের মদদে পাহাড়ে ‘উপজাতি সন্ত্রাসবাদ’ উস্কে দেয়া হচ্ছে’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৭২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে মার্কিন-ভারতের মদদে পাহাড়ে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের মিথ্যা প্রপাগান্ডা ‘আদিবাসী’ প্রচারণা ও ‘উপজাতি সন্ত্রাসবাদ’ উস্কে দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) পাহাড়ে হিংস্র উপজাতি কর্তৃক স্কুল শিক্ষক সোহেল রানাকে হত্যা করে জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি সশস্ত্রগোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে ৭ দফা দাবিতে করা এক বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাবিতে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এমন মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক।

সমাবেশে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষার্থে ৭ দফা দাবি তুলে ধরে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।

সমাবেশে মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারত উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে। তাছাড়া সম্প্রতি ভারত থেকে প্রকাশ্যে বাংলাদেশের পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি আসছে। কথা হলো- একই কাজ যদি ভারতের সেভেন সিস্টার্সের ক্ষেত্রে বাংলাদেশও করে তখন কিন্তু ভারতও শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, ভারতের সেভেন সিস্টার্স বা চিকেন নেকের কণ্ঠ চেপে ধরার অনেক উপাদানই বাংলাদেশের নাগালে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা পছন্দ করে না। একইভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে (ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) আমেরিকার স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশ যদি এখানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে মার্কিন স্বার্থের বিপরীত ব্লকে চলে যায় তাহলে কিন্তু আমেরিকা এই অঞ্চলে সুবিধা করতে পারবে না।

অতএব ঘুড়ির নাটাই কিন্তু শুধু ভারত কিংবা আমেরিকার হাতেই নেই। বাংলাদেশের হাতেও রয়েছে- এটা ভারত ও আমেরিকাকে স্মরণে রাখা উচিত।

সমাবেশে হিল হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট মিনহাজ ত্বকি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বাঙালি শিক্ষকদেরকে বের করে দেওয়ার জন্য একটা ট্রামকার্ড ব্যবহার করে সেটা হলো ধর্ষক নাটক। সোহেল রানা হত্যাও এর ব্যতিক্রম নয়। এভাবে পাহাড়ে সেনাবাহিনীকে একটা ক্রিমিনাল রোলে অ্যাটাক করে, বাঙালিদেরকে সেটেলার কার্ড ব্যবহার করে। আসলে পাহাড়ে উপজাতি ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না এটাই বলতে চায়। আমি বলবো সাবধান হয়ে যাও, না হয় তোমাদের ট্রাম্পকার্ড তোমাদের গায়ে গিয়ে পড়তে পারে।

সমাবেশে মুহম্মদ জিয়াউল হক আরো বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি আদায় করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। নতুন আরেকটি তথাকথিত স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ তৈরি হবে। এর কারণ হচ্ছে- বিশ্বব্যাপী বিতর্কিত আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘ চার্টার। জাতিসংঘের উক্ত চার্টারে বর্ণিত বিতর্কিত বিষয়গুলো আদিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও কোনো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সম্প্রদায় ২০০১ সাল থেকে হঠাৎ করে নিজেদেরকে আদিবাসী দাবি করে বসছে, স্বীকৃতি চাইছে। কিন্তু তাদের আদিবাসী দাবি চরম ভণ্ডামো, জালিয়াতি ও ইতিহাস বিকৃতি। ইতিহাস ও নৃতত্ত্ব অনুযায়ী- তাদের আদি নিবাস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার, ভারত, কম্বোডিয়া ইত্যাদি রাষ্ট্রসমূহ। তারা ওখানকারই আদিবাসী বা আদি বাসিন্দা, বাংলাদেশের নয়। বাংলাদেশে তাদের মধ্যে একটা অংশ দখলদার (সেটেলার) যারা দস্যুবৃত্তি করতে করতে অবৈধভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে জোরপূর্বক বাঙালিদের ভূমি দখল করেছে। অনেক বাঙালি পরিবারকে ভূমিচ্যুতও করেছে। তাদের আরেকটা অংশ আশপাশের অঞ্চল থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের এই উভয় শ্রেণিই বাংলাদেশের আদিম কিংবা প্রকৃত অধিবাসী নয়। তাদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে প্রচার করা মানে একটি ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক সত্যকে অস্বীকার করা; যে প্রচারণার পেছনে আমেরিকা, ভারত, খ্রিষ্টান মিশনারি ও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিওর মদদ রয়েছে। যাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তথাকথিত জুম্মল্যান্ড নামে আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করা।

সমাবেশে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক সরকারের নিকট ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন-

১. বাংলাদেশের উপজাতিদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অখণ্ডতাবিরোধী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ ও ‘জুম্ম’ শব্দ ব্যবহার এবং বাংলাদেশের বাঙালিদের সম্বোধনে ‘সেটেলার’ শব্দ ব্যবহারকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। ব্যক্তি, এনজিও, মিশনারি, গণমাধ্যম কিংবা প্রতিষ্ঠান যারাই উপরিউক্ত শব্দ ব্যবহার করবে তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো বিদেশি ওসব শব্দ ব্যবহার করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে শক্তভাবে তার প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

২. অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও সংবিধানবিরোধী জাতিগত বৈষম্যমূলক প্রচলিত আইন, চুক্তি ও বিধিসমূহ সংস্কার করে দেশের সকলের জন্য এক সংবিধান ও এক আইন প্রণয়ন ও জারি করতে হবে। সংবিধান সংস্কারে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট আইন, চুক্তি ও বিধি সংস্কার, সংশোধন কিংবা নতুন আইন/বিধিমালা প্রণয়নে সরকারকে অবশ্যই ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র সুপারিশ, পরামর্শ ও প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।

৩. উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক পাহাড়ের বাঙালি মুসলমান নিধনের জাতিগত ধারাবাহিক কিলিং মিশনের শিকার পাহাড়ের স্কুল শিক্ষক সোহেল রানা হত্যার সাথে জড়িত ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে এবং পার্বত্য সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাশাপাশি পাহাড়ের এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে অর্থায়ন, সন্ত্রাসবাদে সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও এদের মদদদাতা রাষ্ট্রীয়-অরাষ্ট্রীয় সংস্থা, বামপন্থী কিছু রাজনৈতিক দল, কথিত শিক্ষক, এনজিও, মিশনারি ও গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুঁজে বের করতে ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আলাদা কমিটি করতে হবে।

৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি চাকুরিতে উপজাতি কোটা বাতিল করতে হবে। পাহাড়ের বাঙালিদের বাদ দিয়ে উপজাতিদের জন্য কোটা রাখা মারাত্মক রকমের বৈষম্য। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফসল নতুন বাংলাদেশে উপজাতি কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে।

৫. ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিতে প্রবেশ করিয়ে বাংলাদেশকে ভারত-আমেরিকা বনাম চীন দ্বন্দ্বের প্রক্সি স্টেট বা বলির পাঠা বানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আরো বেশি অস্থিতিশীলতা ও ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়া যাবে না। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।

৬. পার্বত্য অঞ্চলে চলমান অস্থিতিশীলতা নিরসন, সন্ত্রাস দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা ক্যাম্প বাড়াতে হবে।

৭. ১৯৯৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী উপজাতি কর্তৃক সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ না করায় সংবিধানবিরোধী পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বাতিল করতে হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions