প্রতিদিন হাসপাতালে ৬০৩ ডেঙ্গু রোগী,সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রতিদিন গড়ে ৬০৩ জনের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় দৈনিক মৃত্যুর হার দুই দশমিক ৬৬ শতাংশ। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা গত আগস্টের তুলনায় তিনগুণের বেশি এবং চলতি বছরের অন্য মাসগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরের ৩০ দিনে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৮ হাজার ৯৭ জন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৮০ জনের। আগস্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬ হাজার ৫২১ এবং মৃত্যু হয় ২৭ জনের; জুলাইয়ে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ২ হাজার ৬৬৯ এবং মৃত্যু হয় ১২ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বাংলাদেশে গত এক দিনে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ১ হাজার ১৫২ জন ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৯৩৮ জনে। বাংলাদেশে এর আগে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন, ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন এবং ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন ডেঙ্গু রোগ নিয়ে। সে হিসাবে এ বছর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা এ যাবৎকালে চতুর্থ সর্বোচ্চ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এতে এ বছর ডেঙ্গুতে ১৬৩ জনের মৃত্যু হলো।

গত এক দিনে ভর্তি রোগীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৪৯ জন। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ২০৯, ময়মনসিংহে ২৭, চট্টগ্রামে ২৩৩, খুলনায় ৮৬, রাজশাহী বিভাগে ৪০, রংপুর বিভাগে ৩৮ এবং বরিশাল বিভাগে ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে সিলেট বিভাগে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগী ভর্তি হননি।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৪৬২ ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৭৫৯ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭০৩ জন। এ বছর ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৭ হাজার ৪৩০ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ৫০৮ জন।

এর আগে জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। মার্চে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন, যাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৪ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। মে মাসে ৬৪৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। জুনে ৭৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। জুলাইয়ে ২ হাজার ৬৬৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়। আগস্টে ৬ হাজার ৫২১ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।

বিভিন্ন তথ্যে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে নতুন করে আরও ৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি মাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯০৭ জন। এ ছাড়া চলতি বছর ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে সেপ্টেম্বরেই প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন। সবশেষ রিফা আক্তার নামে আরও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। এদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শোভা খাতুন (১৮) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন- হালুয়াঘাট উপজেলার আমতৈল গ্রামের মো. মোস্তফা (৬৫) ও গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানা এলাকার নাসিমা খাতুন। হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চালু করা হয়েছে ৬০ শয্যার আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড। গত রোববার পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনিস নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত ৯ মাসে বরিশাল বিভাগে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ছয় সদস্যবিশিষ্ট দুটি কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। দুই সিটির প্রশাসকদের আহ্বায়ক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে তিনজন করে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে থাকবেন। এ ছাড়া উভয় সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেও সদস্য করা হয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions