রাঙ্গামাটি:- খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনার কারণ উদঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটি আগামীকাল রবিবার থেকে তদন্তের কাজ শুরু করবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় জানান, রবিবার বিকালে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবেন কমিটি।
উল্লেখ, বুধবার(১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. মামুনকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জেরে সহিংসতায় ছড়িয়ে পড়ে। দীঘিনালায় অর্ধশতাধিক দোকানপাটে আগুন, স্বনির্ভরে সেনাবাহিনীর উপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। সহিংসতায় খাগড়াছড়িতে ৩ জন ও রাঙ্গামাটি একজনসহ ৪ জন নিহত হয়।
সহিংসতার কারণ উদঘাটনে গত বৃস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। কমিটিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন ও তদন্তপূর্বক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের স্বাক্ষর করা অফিস আদেশে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত সহিংস ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যতে একই জাতীয় ঘটনার পুনরৃত্তি রোধে যথাযথ সুপারিশ প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সহিংসতার ঘটনার পরদিন দুই অন্তবর্তীকালীন সরকারের তিন প্রভাবশালী উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় সফর করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিশিষ্টজন ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। পরে সাংবাদিকদের একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি হামলা: ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান—-
এদিকে গত ১৯-২০ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা তদন্তের জন্য সরকার কর্তৃক গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ও অংশগ্রহণে স্বাধীন ও অবাধ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের সহসভাপতি নূতন কুমার চাকমা ইউপিডিএফের দাবিকে পাশ কাটিয়ে সরকার কর্তৃক বৃহস্পতিবার একতরফাভাবে তদন্ত কমিটি গঠনকে লোকদেখানো আখ্যায়িত করে বলেন, এই কমিটির প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের জনগণের কোন আস্থা নেই।
অতীতে বিভিন্ন সময় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর ব্যর্থতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ”লোগাং গণহত্যা ও কল্পনা চাকমার অপহরণ তদন্তের জন্য গঠিত দু’টি তদন্ত কমিশন সম্পর্কে জনগণের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। এই কমিটিগুলো স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল।”
ইউপিডিএফ নেতা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধান ও অংশগ্রহণে তদন্ত ছাড়া হামলার প্রকৃত কারণ ও অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।