রাঙ্গামাটি:- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দিকে চলে আসায় রাঙ্গামাটি শহরে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ জারি করা হয়। অন্যদিকে বিক্ষুব্দ জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টার সড়ক ও নৌ অবরোধে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটন এলাকায় ঘুরতে যাওয়া হাজারও পর্যটক আটকা পড়েছেন বলে জানা গেছে।
২০ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি শহরে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের বের করা একটি বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতায় জড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকারে ধারণ করে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। ঘটনার পরদিন শনিবার উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সরকারের চার উপদেষ্টা রাঙ্গামাটি পরিদর্শন করে গেছেন। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করলে রোববার সকাল ১১টার পর হতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. মোমারফ হোসেন খান। এছাড়াও এদিন বিকাল ৩টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশিষ্টজন, প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তাদের নিয়ে সম্প্রীতি সভা ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে রাঙ্গামাটি শহরে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলেও রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত রয়েছে। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ঘটনার তৃতীয় দিন পেরিয়ে গেলেও শহরসহ জেলায় জনমনে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে।
রোববার সকালে শহরের বনরুপা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শওকত ওসমান, জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার এসএম ফরহাদ হোসেনসহ প্রশাসনিক, সামরিক ও বেসামরিক পদস্থ কর্মকর্তরা। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টার সড়ক ও নৌ অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিক্ষুব্দ জুম্ম ছাত্র-জনতা। এতে সর্মথন দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ফলে রাঙ্গামামাটি-নানিয়ারচর-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি-বাঘাইছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া যানবাহন ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত রাঙ্গামাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছে বাস, ট্রাক, অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। এসব কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় রাঙ্গামাটির সাজেক পর্যটন এলাকায় হাজার পর্যটক আটকা রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার।
সম্প্রীতি সমাবেশ: ২০ সেপ্টেম্বর পাহাড়ি-বাঙালির সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার পর রাঙ্গামাটিতে উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বিশ্বাস ফেরাতে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বিকাল ৩টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেলা প্রশাসন এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মোমারফ হোসেন খান।
সমাবেশে সেনাবাহিনীর রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এরশাদ হোসেন চৌধুরী, পুলিশ সুপার এসএম ফরহাদ হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসাসহ পদস্থ কর্মকর্তা, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, জেলা জামায়েতের আমীর আবদুল আলীম, জনসংহতি সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বলা হয়, ঘটনার দিন গুজব ছড়িয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে উসকানি-উত্তেজনা তৈরি করে পরিস্থিতিকে দ্রুত ভয়াবহ করে তোলে। এতে পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে এবং উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ লোকজনের মাঝে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পওে শহরে ১৪৪ ধারা জারিসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ অবস্থায় উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনের মনে সৃষ্ট ভয়ভীতি, আতঙ্ক, অবিশ্বাস দূর করে শান্তি-সম্প্রীতি পুনঃস্থাপন আবশ্যক। এ লক্ষ্যে সব ধরনের গুজব প্রতিহত করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে শান্তি ও সম্প্রীতি সভা, র্যালিসহ এলাকায় এলাকায় সম্প্রীতি সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব ওঠে আসে সমাবেশে। এসব প্রস্তাবে শহরে সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান নিশ্চিত ও সম্প্রীতি পুনঃস্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এ সভায়। এর আগে শহরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এদিন সকাল ১১টায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসন।