সংসদ বিলুপ্ত,ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ৬৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল ভোররাতে প্রথম প্রফেসর ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করে বার্তা দেয়া হয় আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে। পরে বিকালে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পেশ করেন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। বৈঠকে তিন বাহিনী প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান এবং আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ ১৩ জন সমন্বয়ক অংশ নেন। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

এর আগে মঙ্গলবার ভোররাতে এক ভিডিও বার্তায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ভিডিওতে নাহিদের পাশে আসিফ ছাড়াও আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ছিলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবের জন্য তারা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলেন। জরুরি পরিস্থিতিতে তারা এখনই একটি রূপরেখা ঘোষণা করছেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সর্বজন গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে।

তিনি ছাত্র-জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে এই গুরুদায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা সকালের মধ্যেই এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দেখতে চান। প্রেসিডেন্টের কাছে আহ্বান থাকবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নামও সকালের মধ্যে ঘোষণা করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। তবে দুপুরের আগে আরেক বিবৃতিতে বেলা তিনটার মধ্যে সংসদ ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানান সমন্বয়করা। এই আহ্বানের পর নির্ধারিত সময়েই প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙে দেয়ার নির্দেশনা দেন।

বার্তায় নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে রাজপথে থেকে তাদের অভ্যুত্থান রক্ষা করতে হবে। তারা রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। তাদের যে প্রতিশ্রুতি একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করার জন্য, সেটিকে তাদের অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। অবশ্যই ছাত্র-জনতার প্রস্তাবিত সরকার বাদে কোনো ধরনের সরকার মেনে নেয়া হবে না। অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার যে প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে এই সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে অবিলম্বে। ওদিকে ছাত্রদের প্রস্তাবের পর প্রফেসর ড. ইউনূস জানিয়েছেন, ছাত্ররা তার কাছে প্রস্তাব রেখেছেন। তাদের প্রস্তাব তিনি ফেলতে পারেন না।
ওদিকে দুপুরে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। দুপুরের পর বঙ্গভবন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে অনতিবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। আর লুটতরাজ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধে সেনাবাহিনী পদক্ষেপ নেবে। বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

এদিন বেলা সোয়া ১২টার দিকে এক ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রেসিডেন্ট গতকাল বলেছেন যে, তিনি অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করবেন। কিন্তু আমরা এখনো দেখছি যে, একটি অভ্যুত্থানের পরেও এই ফ্যাসিস্ট হাসিনার সংসদ রয়ে গেছে। আজ বিকাল ৩টার মধ্যে যদি সংসদের বিলুপ্তি ঘোষণা না করা হয়, তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

তিনি বলেন, সারা দেশে লুটপাট, সহিংসতা ও সামপ্রদায়িক হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আমরা মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের ঘটনাকে প্রতিহত করার জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে। কেউ যেন এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর সুযোগ না পায়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শহীদের রক্তের বিনিময়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটিয়েছেন এবং একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু তাদের এই অর্জনকে নস্যাৎ করতে বিভিন্ন শক্তি ইতিমধ্যে তৎপর রয়েছে এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাচ্ছি, এই বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদী সাম্রাজ্য থেকে মুক্ত করার জন্য, একটি নতুন ও জনগণের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সকল ধরনের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করার জন্য বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সদা প্রস্তুত।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions