উত্তাল সারাদেশ, আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গুলি, সংঘর্ষ, ১৪ পুলিশসহ নিহত ১০০,অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ৬৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানীর শাহবাগ ও সাইন্সল্যাবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বিক্ষোভে উত্তাল আফতাবনগর, উত্তরা, ধানমণ্ডি ও জাতীয় প্রেস ক্লাব। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ চলছে। রাজধানীতে ৯ জনসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার বাইরে ১৯ জেলায় পুলিশসহ অন্তত ৯১ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই হলেন শিক্ষার্থী। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৩, লক্ষ্মীপুরে ১০, ফেনীতে ৮, নরসিংদীতে ৬, কিশোরগঞ্জে ৪, মুন্সীগঞ্জে ৪, রংপুরে ৫, সিলেটে ৬, মাগুরায় ৪, পাবনায় ৩, বগুড়ায় ৪, কুমিল্লায় ৪, বরিশালে ২, শেরপুরে ২, ভোলায় ১, জয়পুরহাটে ১, সাভারে ১, হবিগঞ্জে ১, কক্সবাজারে ১ জন, কেরানীগঞ্জ ১ জন রয়েছেন।

সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ নিহত

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শাহবাগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিতে রোববার সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দেন আন্দোলনকারীরা।

সকালে সাড়ে ১০টার পরে আন্দোলনকারীরা পুরান ঢাকার দিক থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের দিকে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দেন আন্দোলনকারীরা।

সংঘর্ষের সময় হাসপাতালের প্রাঙ্গণে রাখা গাড়িগুলো ভাঙচুর করা হয়। সে সময় হাসপাতালের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ইট পাটকেল ছুড়ছিলেন। আগুন দেয়া হয়েছে পরীবাগ ওভারব্রিজের নিচে।

টিএসসি

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতেও অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে টিএসসিতে জড়ো হতে থাকেন তারা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

ঢাকায় ৭ জন নিহত

সাইন্সল্যাবে ১ জনসহ ঢাকায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে সাইন্সল্যাব এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল ১১টার দিকে বাটা সিগন্যালের দিক থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল সাইন্সল্যাবের দিকে আসতে থাকে এবং আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আন্দোলনকারীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পিছু হটে।

জাতীয় প্রেস ক্লাব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রেসক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। তাদের স্লোগানে মুখর প্রেস ক্লাব সড়ক। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি), গণহত্যা ও নিপীড়ন বিরোধী আইনজীবী, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন আন্দোলনকারীরা।

এ সময় বিক্ষোভ থেকে ‘এক দফা, এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’, ‘পেশাজীবীরা দিচ্ছে ডাক’, ‘শেখ হাসিনা সরকার খুনি সরকার’, ‘শেখ হাসিনা সরকার, ব্যাংক ডাকাতি সরকার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।

আফতাবগর

অন্যদিকে বৈষম‌্যবি‌রো‌ধী ছাত্র আন্দোল‌নের এক দফা দা‌বির কর্মসূ‌চি‌তে সাড়া দি‌য়ে আফতাবগরে জড়ো হ‌য়ে‌ছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকাল সা‌ড়ে ১০টা থে‌কে রাজধানীর আফতাবনগ‌রের ইস্টও‌য়েস্ট বিশ্ব‌বিদ‌্যালয় ফট‌কের সা‌মনে অবস্থান নেন তারা।

স‌রেজ‌মি‌নে দেখা যায়, আফতাব নগ‌রের ইস্টও‌য়েস্ট বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের সাম‌নে শিক্ষার্থীরা বি‌ক্ষোভ কর‌ছেন। এ সময় ইস্ট ওয়েস্ট ছাড়াও আশপা‌শের আরো ক‌য়েক‌টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠা‌নের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। কর্মসূ‌চির শুরুর দি‌কে শিক্ষার্থীর সংখ‌্যা কম থাক‌লেও ধী‌রে ধী‌রে তা বাড়‌তে থা‌কে।

মুন্সীগঞ্জে নিহত ৪

মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে ৪ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। গুলিবিদ্ধ একজন ঢাকায় আনার পথে সিরাজখানে মারা যান একজন। আজ রোববার সকাল পৌনে ১০টা থেকে পৌনে ১২ টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ ঘটে।

নিহতদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদের অধিকাংশের বয়স ২০-২৫ বছরের মধ্যে। দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. আবু হেনা জামাল বেলা পৌনে ১২ টার দিকে বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দুজন মৃত ছিল। তাদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মাগুরায় নিহত ৪

ওদিকে মাগুরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এ সময় সংঘর্ষে ৪ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১ টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, সকালে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় নিহত হন রাব্বী।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়। এছাড়া চবি শিক্ষার্থী ফরহাদ ও কলেজ শিক্ষার্থী সুমন নামের একজন ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

রংপুরে নিহত ৫

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন।

বগুড়ায় ৩ জন নিহত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে বগুড়ায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানে দুজন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে।
বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাজারো বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে তারা।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান। তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন। তার নাম মনিরুল ইসলাম (২৪)।

অন্যদিকে আহত চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালেও একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।

পাবনায় নিহত ৩

পাবনার খেয়াঘাট মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে গুলি চালানো হলে ৩ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা এই গুলি চালান। বিক্ষোভকারীরা এরপর তার গাড়ি পুড়িয়ে দেন। এই ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক।

লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ৫, আহত ৫০

লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫০ জন।

সিরাজগঞ্জে নিহত ৯

সিরাজগঞ্জে ৯ জন নিহত হয়েছেন।

বরিশালে নিহত ২

বরিশালে নিহত হয়েছেন ২ জন।

জয়পুরহাটে নিহত ১

জয়পুরহাটে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

কুমিল্লায় নিহত ২

সংঘর্ষে কুমিল্লায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

কিশোরগঞ্জে নিহত ৪

কিশোরগঞ্জে নিহত ৪ জন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া ভোলায় ৩ জন ফেনিতে ৭ জন এবং ধামরাইতে ১ জন নিহত হয়েছেন।

রংপুরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যর বাসায় আগুন

রংপুরের বদরগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী (ডিউক) ও পৌরসভার মেয়র আহসানুল হক চৌধুরীর (টুটুল) বাসায় আগুন দেওয়া ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

এর আগে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। পরে পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে আগুন দেয়।

উল্লেখ্য, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ রোববার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশে অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।

এর আগে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে এই ঘোষণা দেয়া হয়। এই সমাবেশেই অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions