মার্চ ফর জাস্টিস ঘিরে উত্তেজনা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪
  • ৬৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় সারা দেশে গ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, হত্যা এবং ৯ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার তাঁরা বিভিন্ন সড়ক, ক্যাম্পাস ও আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেন এবং অবস্থান নেন। এ সময় বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা।

বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন মার্চ ফর জাস্টিস ঘিরে উত্তেজনাআন্দোলনকারী আহত হন, আবার কাউকে কাউকে আটকও করে পুলিশ। তবে বেশির ভাগ স্থানে আটকদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

গতকাল ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনে দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে হাইকোর্ট এলাকায় জড়ো হতে শুরু করলে পুলিশের বাধার মুখে প্রথমে পিছু হটেন।

প্রেস ক্লাবসংলগ্ন কদম ফোয়ারার সামনে আন্দোলনকারীরা পৌঁছালে পুলিশ তাঁদের পেছনে হটিয়ে দেয়। দুপুর পৌনে ১টার দিকে কার্জন হলের দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষক, অভিভাবক এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট মোড়ের দিকে এগোলে তাঁদের শিশু একাডেমির সামনে আটকে দেয় পুলিশ। একটু পর বুয়েট থেকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি দল মিছিল নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে সেখানেই বক্তব্য দেন সাদা দলের শিক্ষকরা।

অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের একটি দল কদম ফোয়ারার দিক থেকে এসে হাইকোর্ট মোড়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

দুপুর সোয়া ১টার দিকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে দিতে ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট আঙিনার ভেতরে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে তাঁরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন ও সুপ্রিম কোর্টের পুরনো ভবনের মাঝখানে চলাচলের জায়গায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। প্রায় আধাঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।

পরে আন্দোলনকারীরা দুপুর ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আঙিনা থেকে বের হয়ে যান। বের হওয়ার সময় মাজার গেটের মূল ফটক খুলে দেয় পুলিশ। পরে তাঁরা শিক্ষা ভবনের সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বরে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষার্থী, আইনজীবী, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংস্কৃতিককর্মী।

দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর মিরপুর বেনারসি পল্লীর একটি সড়কে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা মিরপুর-১০ নম্বর মূল সড়কের দিকে আসতে থাকেন। তবে পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে মিছিলটি মূল সড়কে এসে গোলচত্বরের দিকে যেতে চাইলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় আন্দোলনকারীরা ১১ নম্বরের দিকে যেতে চাইলে সেখানেও বাধা দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিলে আন্দোলনকারীদের মিছিলটি বেনারসি পল্লীর সড়কে চলে যায়। পরে তাঁদের বুঝিয়ে বাসায় ফেরত পাঠানো হয়।

সিলেটে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি পালন শুরু করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। গতকাল সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরে যেতে বললেও দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা সিলেট নগরের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের সুবিদবাজার পয়েন্টে পৌঁছালে সেখানে তাঁরা পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তাঁরা সামনে এগোতে শুরু করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

বরিশালে গতকাল ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে চার সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকজন আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ। গতকাল দুপুরে নগরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হল ও ফজলুল হক এভিনিউ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সকাল ১১টার পর নগরের সদর রোডসংলগ্ন কাঠপট্টি সড়কের মুখে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ প্রতিবাদ মিছিল বের করে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের প্রথমে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে বাধার মুখে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। পরে সিটি কলেজের গলির মুখে আন্দোলনকারীদের আটকে দেওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা একজোট হয়ে সদর রোডে অবস্থান নিলে ধাওয়া দিয়ে তাঁদের ফকিরবাড়ির রোডে আটকে দেয় পুলিশ। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ঠাকুরগাঁওয়ে আন্দোলনকারীদের কর্মসুচিতে বাধা ও লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। গতকাল সদর উপজেলা পৌর শহরের আর্ট গ্যালারি অপরাজেয় ৭১ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল কোর্ট চত্বরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মিছিলটি জেলা দায়রা জজ আদালতের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

গতকাল ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকও কর্মসূচিতে অংশ নেন। দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদ ভবনসংলগ্ন মহুয়া মঞ্চের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়ক, নতুন প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তাঁরা। এরপর একই স্থানে গ্রেপ্তার করা শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। কালের কন্ঠ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions