ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃবিতে এ প্রতিক্রিয়া জানায় দলটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্র আন্দোলনে বর্বরোচিত গণহত্যার দায়ে আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের চলমান ইস্যুকে ধামাচাপা দিতে নতুন বিতর্ক, নতুন ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে, যা বুমেরাং হতে বাধ্য। পরিকল্পিতভাবে নন ইস্যুকে ইস্যু বানানোর পুরাতন কার্ড নতুন করে খেলে আওয়ামী লীগ জনদৃষ্টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে পারবে না। শত শত ছাত্র, কিশোর, যুবক, শিশুসহ জনতার রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। এসব হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেরা পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি আরো জটিল ও সংঘাতময় করে তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানোর আশঙ্কা করছে দেশবাসী। অতীতেও তারা নিজেরা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করেছে। এখনও করছে। বিরোধী দল-মতকে নির্মূল করে বিরোধী দল শূন্য করার সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে আওয়ামী লীগ তা ভবিষ্যতেও করতে পারে। এজন্য দেশবাসী ও রাজনৈতিক দলসহ সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানাই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’- শহীদ জিয়াউর এই উক্তিকে ধারণ করে বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ নয়, উন্মুক্ত রাজনীতির ময়দানে জনগণের সমর্থনে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলায় বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ এমন এক রাজনৈতিক দল, তারা ‘হয় সঙ্গী, না হয় জঙ্গী’ নীতিতে বিশ্বাসী। কেননা, বাংলাদেশের সাংবিধানিক অধিকার বলে নাগরিকরা যে কোনো রাজনৈতিক দল, সংগঠন করতে পারেন। আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়সংগত ও বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ কোনো তদন্ত ছাড়াই কোনো রাজনৈতিক দলকে অপবাদ দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা অন্যায় এবং সংবিধান সম্মত নয়। সরকার এসব অগণতান্ত্রিক কাজ করে এক দফা আন্দোলন থেকে জনগণের মনোযোগ সরাতে পারবে না। আমরা দল মত নির্বিশেষে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকলকে রাষ্ট্রঘাতি-প্রাণঘাতি সরকারের পতনের আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গণহত্যা, নৃশংসতা, ফাসিবাদী কায়দায় নির্মম-নির্দয় দমন নিপীড়নের জন্য সরকার দেশ-বিদেশে যখন তীব্র ক্ষোভ, ঘৃণা, চাপের মুখোমুখি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যম যখন সরকারকে জবাবদিহি করতে বলছে, দেশে দল মত নির্বিশেষে ছাত্র, অভিভাবক, শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিক, আইনজীবী, যুবক, নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ প্রতিবাদ, ধিক্কার জানিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন ও চাপে রাখতে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তদন্ত ছাড়াই নিজেদের দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিন্দনীয়, অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক। বিবৃতিতে বলা হয়- ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে গিয়ে যে হত্যাযজ্ঞ করেছে, তা উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল। এই হত্যাযজ্ঞ থেকে নিজেদেরকে আড়াল করতে গণবিরোধী সরকার কতকগুলো প্রতিষ্ঠানে ন্যাক্কারজনক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে উল্টো এসবের দায় বিরোধী দলের ওপর চাপাচ্ছে। অথচ বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত সত্য যে, এই হত্যা ও নৈরাজ্যের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারই দায়ী। জনসাধারণ নিজের চোখে দেখেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন অস্ত্র হাতে নির্মমভাবে নির্বিচারে গুলি করে নিরীহ শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণকে হত্যা করেছে। এমনকি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আকাশ পথেও হেলিকপ্টার থেকে গুলি, টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থী, জনতা, বাসা বাড়িতে থাকা নিষ্পাপ ছোট্ট শিশু, গৃহিনী নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। কোনোভাবেই আওয়ামী সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। অথচ সরকার এর দায় বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী ওপর চাপানোর অপউদ্দেশ্যে দলের সিনিয়র নেতা এবং কর্মীসহ ১১ হাজার নিরপরাধ ছাত্র-জনতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। অনেক নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, রিমান্ডের নামে ও কারাগারেও তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
জামায়াত নিষিদ্ধে বিএনপির প্রতিক্রিয়া
জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি
বিবৃতিতে বলা হয়- আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে নির্মূল কিংবা নিষিদ্ধ করতে সিদ্ধহস্ত। স্বাধীনতা পরেও ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ বিরোধী দলসমূহের আন্দোলন মোকাবেলা করতে না পেরে সব রাজনৈতিক দলকে আইন করে নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল গঠন করেছিলো। ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও রাজনীতি উন্মুক্ত কওে একদলীয় বাকশালী রাজনৈতিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় রাজনীতির হাত ধরেই বাকশালে বিলীন হওয়া আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বর্তমানে রাজনীতি করছে।
বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়- আজকে যাদের নিষিদ্ধ করা হলো, সেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যতা সর্বজনবিদিত। এক সময় তারা পরস্পরের সঙ্গী ছিলো। ৮০র দশকে জামায়াতের তৎকালীন নেতারা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে ধানমন্ডিতে সাক্ষাৎ করলে কোরআন ও জায়নামাজ উপহার দিয়েছিলেন। উপহার দেওয়া-নেওয়ার সময় উভয় দলের নেতাদের হাস্যজ্জল ছবি আজও অনেকের মানসপটে রয়েছে। তখন জামায়াতকে তাদের স্বাধীনতা বিরোধী বা জঙ্গী মনে হয় নাই। আজ আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করায় জামায়াত জঙ্গী হয়ে গেছে। অথচ কোন রাজনৈতিক দল জঙ্গী ,তা দেশবাসী ভালো করেই জানেন।