ডেস্ক রির্পোট:- কোটা আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্র-জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধর-পাকড় নিয়ে আবারও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। বুধবার ‘ফ্রেশ ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ স্টুডেন্ট প্রটেস্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক ধর-পাকড় এবং শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের চড়াও হওয়াকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গত কয়েক দিনে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে নামে শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে পড়ে। যাতে আবারও দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেটে শিক্ষার্থী এবং পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া বুধবার রাজধানী ঢাকা সহ অন্যান্য জেলায়ও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। জুলাই মাস জুড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ। কোটা সংস্কারের দাবিতে সড়ক মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছে তারা। সেসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
যাতে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আন্দোলনরত প্রায় ১০ হাজার ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মূলত নিহতদের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার এবং আটক ছাত্রজনতার মুক্তির দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। জুলাইয়ের শেষ দিনে দেশটিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আটকের খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল থেকে বিবিসির প্রতিনিধির পাঠানো ছবির বরাতে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বরিশালে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ। সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করতে দেখা গেছে। ওইদিন বরিশালে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। এদিন গ্রেপ্তার হওয়া অনেকেই নারী শিক্ষার্থী ছিল। বুধবার শিক্ষার্থীরা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তারা ‘হত্যা, গ্রেপ্তার, হামলার বিরুদ্ধে নতুন কর্মসূচি দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী বিক্ষোভ করছে। জুলাই মাসের শুরু থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নিহত হলে রাতারাতি পুরো দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে এবং ব্যাপক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পরে ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট কোটা ৫ শতাংশ সংরক্ষণের রায় দেন। তবে শিক্ষার্থীদের নিহত এবং তাদের গণগ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা দেশটির বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।
দেশের এমন সহিংস পরিস্থিতির জন্য সরকার প্রধান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে দেশজুড়ে সরকারের দমন-পীড়নের সমালোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছেন এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, স্থগিত সহযোগিতা চুক্তির উদ্দেশ ছিল দেশটির প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার ইইউ এবং বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা।