সরকারই ইন্টারনেট বন্ধ করেছিল

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪
  • ৮২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল সরকারি সংস্থার নির্দেশে। ই-মেইল পাঠিয়ে ও খুদে বার্তা দিয়ে মোবাইল, আইএসপি ও আইআইজি অপারেটরদের ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে বলা হয়। যদিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হলে ১৭ জুলাই (বুধবার) রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত নয়টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়।

১৭ জুলাই দেশে বিক্ষোভ হলেও কেউ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ১৮ জুলাই ব্যাপক সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাত ৮টা ৪৮ মিনিটে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনা পায় একটি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, নির্দেশনা পেয়ে তাঁরা গ্রাহকপর্যায়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএসপিগুলোকে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ বন্ধ করে দেন।

আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলো আইএসপিদের ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করে। তারা ব্যান্ডউইডথ বন্ধ করলে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। গ্রাহকেরা বাসায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেন আইএসপিদের কাছ থেকে।
ব্রডব্যান্ডের আগে বন্ধ হয়েছিল মোবাইল ইন্টারনেট। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মোবাইল অপারেটরদের ই-মেইল পাঠিয়ে ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বলা হয়েছিল। তবে ই-মেইলটি জুনাইদ আহ্‌মেদের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো হয়নি। ই-মেইলের পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকেও বার্তা পাঠানো হয়েছিল।

১৭ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের পরদিন এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ এক অনুষ্ঠানে বলেন, জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

ইন্টারনেট বন্ধ করায় গ্রামীণফোনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। ২০ জুলাই গ্রামীণফোনের মালিক প্রতিষ্ঠান টেলিনর এশিয়া এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে। গ্রামীণফোন তাঁদের জানিয়েছে, বাংলাদেশে থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেট ১৭ জুলাই বন্ধের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

পাঁচ দিন পর ২৩ জুলাই রাতে দেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড সেবা চালু করে দেওয়া হয়। আজ রোববার বেলা ৩টা থেকে চালু করা হয় মোবাইল ইন্টারনেট। তবে বন্ধ রাখা হচ্ছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ বিভিন্ন সেবা।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের পর ঢাকার মহাখালীতে আগুন দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, আগুনে তার পুড়ে যাওয়া এবং অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছে।

১৮ জুলাই বিকেলে মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেওয়া হয়। তার পাশেই খাজা টাওয়ার, যেখানে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের বিভিন্ন সরঞ্জাম স্থাপন করা রয়েছে। ২০ জুলাই সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুনের কাছে তার পুড়েছে। ওই আগুনের কিছু আঁচ লেগেছে খাজা টাওয়ারে। তবে খাজা টাওয়ারে আগুন দেওয়া হয়নি।

২২ জুলাই প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের নামে মুঠোফোন গ্রাহকদের দেওয়া এক খুদে বার্তায় বলা হয়, সন্ত্রাসীদের অগ্নিসংযোগের কারণে ডেটা সেন্টার পুড়ে যাওয়া এবং আইএসপির তার পুড়ে যাওয়ার কারণে সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত। মেরামত করতে সময় লাগবে।

২৭ জুলাই জুনাইদ আহ্‌মেদ আরেক অনুষ্ঠানে বলেন, সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেনি। মহাখালীতে তিনটি ডেটা সেন্টারে আইএসপিদের ৭০ শতাংশ সার্ভার থাকে। দেশের ৩৪টি আইআইজির মধ্যে ১৮টির ডেটা এই তিনটি সেন্টারে হোস্ট করা। দুই দিন পর তাঁরা জানতে পেরেছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কাঁচপুরে সাবমেরিনের কিছু তার ওপরের দিকে ছিল, সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার মহাখালীর খাজা টাওয়ারে ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর ভয়াবহ আগুন লেগেছিল। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়, ভবনটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তখন দেশে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়নি, কিছুটা ধীরগতির হয়েছিল। তখন আইএসপিএবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, খাজা টাওয়ারের আগুনে দেশের ৪০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকের সেবায় বিঘ্ন ঘটেছে, যার বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের। ঢাকার পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেছে।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে আজ এক ব্রিফিংয়ে জুনাইদ আহ্‌মেদ বলেন, সরকারের কেপিআইভুক্ত (গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো) যেসব প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবা রয়েছে, সেখানে সব সময়ই ইন্টারনেট চলমান ছিল। গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পরিকাঠামোও ইন্টারনেটে সংযুক্ত ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনোই ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পক্ষে না। আমরা কোনো অ্যাপ বন্ধ রাখি না।’

দেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড চালু হয়েছে ২৩ জুলাই। মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলো আজ ২৮ জুলাই।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর যদি ব্রডব্যান্ড চালু করা যায়, তাহলে মোবাইল ইন্টারনেট কেন আগে চালু করা গেল না, কেন ১০ দিন লাগল, সে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা ভুল, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমরা মহাখালীতে গিয়ে দেখেছি, তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।’ তিনি বলেন, ইন্টারনেট কেন বন্ধ হয়েছিল, তা নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সহায়তায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত।প্রথম আলো

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions