আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি তিন বিশেষ নির্দেশনা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪
  • ৪৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- দলীয় নেতাকর্মীদের তিনটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রথমত, নিজ নিজ এলাকায় সহিংস পরবর্তী পরিস্থিতি কঠোর নজরদারিতে রাখা, দ্বিতীয়ত, নিজেরা সতর্ক অবস্থায় থাকা ও তৃতীয়ত, নিজেদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে দ্রুত তা কাটিয়ে ওঠা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা গত কয়েকদিন সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সেখানে পুরো পরিস্থিতি নিয়ে তারা বিশ্লেষণ করেছেন। পাশাপাশি এই ধরনের নাশকতায় নিজেদের ব্যর্থতা কতটুকু- সেটা নিয়েও আলোচনা করছেন। কোটা বিরোধী আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের মোকাবিলার ঘোষণা দেয়া হলেও তাদের খুব একটা মাঠে দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি ব্যাপকভাবে সামনে আসে। তাই নিজেদের এসব দুর্বলতা চিহ্নিত করে দ্রুত তা কাটিয়ে ওঠার নির্দেশনা দেয়া হয় নেতাদের। এদিকে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বেলা আড়াইটা থেকে শুরু হওয়া ওই বৈঠক শেষ হয় সাড়ে ৩টার দিকে। বৈঠকে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নেতা-কর্মীদের ব্রিফ করেন সাধারণ সম্পাদক। তিনি ছাড়া আর কেউ বক্তব্য দেননি। সেখানে দলীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ রকম সহিংসতা সামনেও হতে পারে। তাই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। যেসব এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের দুর্বলতা আছে তা ঠিক করতে হবে। উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় সহিংসতা করার সুযোগ কেন বেশি পেয়েছে আন্দোলনকারীরা, সেখানে দলের ব্যর্থতা আছে কি না তাও কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানাতে বলেছেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেন, বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সংশ্লিষ্ট নেতাদের প্রতি বেশকিছূ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।
তিনি জানতে চান আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও বিশেষ কিছু অঞ্চলে কেন সহিংসতা ঘটলো? এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর থেকে উত্তরায় এসে হামলার শিকার হওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে ঢাকা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, এমপি, মেয়র, কাউন্সিলরদের নিয়ে সমন্বয় সভা করার নির্দেশনা দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান পরে গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আমরা গা-ছাড়া হয়ে গেছি। বুধবারও একই ধরনের বৈঠক করে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে ব্যাপক সহিংসতার শিকার রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও আশপাশের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ডাকা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা-৪, ৫ ও ১৮ আসনের সংসদ সদস্য, এসব এলাকার আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলররা
এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ একাধিক নেতা। বৈঠকে তাণ্ডবের সময় নিজেরা কে কতটা প্রতিরোধ করেছেন সেই বর্ণনা দেন। পরস্পরকে দোষারোপ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য শোনা বন্ধ করে দিয়ে নিজে বক্তব্য দেন। ওবায়দুল কাদের স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, কে কী করেছেন তা আপনাদের চেহারায় লেখা আছে। আমরা এগুলো জানি। বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেয়া। উন্নয়ন, অগ্রগতির চলমান চাকাকে থামিয়ে দিতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা সুপরিকল্পিতভাবে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। কোটা আন্দোলনের নামে তাণ্ডব প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা এ ধরনের ঘৃণিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সহিংসতায় জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একই ধারাবাহিকতায় গতকাল তেজগাঁওয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কয়েকটি ওয়ার্ডের নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
সেখানে তিনি বলেন, নাশকতাকারীরা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিকে ঢাকার বাইরে বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও একই ধরনের বৈঠক করা হয় বলে জানান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। মানবজমিনকে তারা জানান, খুলনা, যশোর, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল আওয়ামী লীগ নেতাদেরও মূল্যায়ন বৈঠকের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবির বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভঙ্গুর সাংগঠনিক অবস্থা ফুটে উঠেছে। আওয়ামী লীগ যে পুলিশ এবং প্রশাসন ছাড়া অক্ষম, রাজপথে দাঁড়ানোর যোগ্যতা রাখে না কোটা সংস্কার আন্দোলনে তা দগ্ধ ঘা-এর মতো করে ফুটে উঠেছে। সবকিছু মিলিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন আওয়ামী লীগকে একটি বড় ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি এই সতর্ক বার্তা অনুধাবন করতে পারে তাহলেই তাদের মঙ্গল।মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions