ডেস্ক রির্পোট:- কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপির) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অস্থিতিশীল পরিবেশের পর বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু হয়েছে। এছাড়া স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে শুরু করেছে অফিসের সময়ও। দেশটিতে এক সপ্তাহের বেশি সহিংসতায় প্রায় ২০০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতি নিয়ে এবিসি নিউজও সংবাদ প্রকাশ করেছে। এপি জানিয়েছে, সাত ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করায় রাজধানীতে হাজার হাজার গাড়ি সড়কে নেমেছে। তবে দেশের অনেক অঞ্চলে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ চালু হয়নি।
বুধবার কয়েক ঘণ্টার জন্য অফিস ও ব্যাংক কয়েক ঘণ্টার জন্য খোলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড চালু করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা এবং অন্যান্য এলাকায় কারফিউ অব্যাহত থাকবে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ জুলাই থেকে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে সংঘর্ষ হয়েছে। দেশটিতে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল। তবে এ আন্দোলনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও ডানপন্থি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে বিশৃঙ্খলা আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে। সারা দেশে এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ঢাকায় অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়।
এরপর কোটা সংস্কার নিয়ে রোববার আদালতের রায় ঘোষণার পর মঙ্গলবার তারা জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং প্রজ্ঞাপনে তাদের আশার প্রতিফলন হয়েছে। তবে রক্তপাত ও মৃত্যুর ঘটনায় সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।
প্রধান বিরোধী দলগুলোর জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর থেকে এ বিক্ষোভ বাংলাদেশের সরকারের কাছে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশজুড়ে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং সরকার মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
এপি জানিয়েছে, বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এছাড়া বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস ও ব্যাংক খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পোশাক কারখানা খোলা হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি প্রধান সড়কে যানজট দেখা গেছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা বিক্ষোভে যোগ দেওয়ায় এবং রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের সদর দপ্তরসহ অনেক সরকারি স্থাপনায় হামলা চালানোর কারণে সহিংসতা গুরুতর হয়ে ওঠে। এ সময় একটি ফ্লাইওভার এবং একটি এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মেট্রো রেলের দুটি স্টেশন ও শতাধিক সরকারি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিএনপি কার্যালয় থেকে লাঠি, লোহার রড এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। যদিও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে শুধুমাত্র ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিসেবা আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে। তিনি আন্দোলনকারীদের দোষারোপ করেন এবং ইন্টারনেট বিভ্রাটের কারণে ডাটা সেন্টারে আগুন ও ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল কেটে দেওয়াকে দায়ী করা হয়েছে।
পলক বলেন, ধীরে ধীরে সারা দেশে ইন্টারনেট চালু করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে করপোরেট ব্যবসা, ব্যাংক, কূটনৈতিক অঞ্চল এবং আরও কিছু এলাকায় ইন্টারনেট পাওয়া যাবে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারফিউ জারি এবং দেখামাত্র গুলির নির্দেশনা দেওয়ার পর এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ সময় রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য এ সময়ে সারা দেশে প্রায় ২৭ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধান, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা এবং রাজনৈতিক অংশীদারদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। তিনি বলেছেন যে, স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সহিংসতার জন্য বিরোধীদেরও দোষারোপ করে অপরাধীদের রেহাই দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।কালবেলা