ডেস্ক রির্পোট:- আজ সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করবে তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা একযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা বলেন, ‘শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। সারা দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি আগামীকালের কর্মসূচি সফল করুন।’
আমাদের অভিভাবকদের বলছি, ‘আমরা আপনাদেরই সন্তান। আমাদের পাশে দাঁড়ান, রক্ষা করুন। এই লড়াইটা শুধু ছাত্রদের না, দলমত-নির্বিশেষে এ দেশের আপামর জনসাধারণের।’
সহমত জানিয়েছে যেসব রাজনৈতিক দল
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির প্রতি বিএনপির পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
দেশের বাম দলগুলোর প্ল্যাটফর্ম বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকেও বিবৃতি দিয়ে এই কর্মসূচিকে সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নেতারা দেশবাসীকে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটও শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছে। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বিবৃতিতে এই কর্মসূচিতে সমর্থনের কথা জানান। বিবৃতিতে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ কোটা আন্দোলনকারীদের দেশব্যাপী কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সদস্যসচিব ফারুক হাসান শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ–বিএসপিপি আগামী ২০ জুলাই (শনিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের হত্যা, ছাত্র, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রতিবাদ এবং মানবিক বাংলাদেশের দাবিতে পেশাজীবী সমাবেশ আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে। সমাবেশে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী নেতারা অংশ নেবেন।
১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি সফল করতে জনগণের প্রতি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার তীব্র নিন্দা জানান। শাটডাউন কর্মসূচি সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি তাঁরা আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) তাওফিকা প্রিয়া।
ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম তাঁর দল এলডিপির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সর্বাত্মক সমর্থন ঘোষণা করেছেন।
দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় তরুণ শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের জনগণকে যৌক্তিক কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে গণফোরাম। গণফোরাম সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী সরকারি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে দেশবাসীকে এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে ছয় জনকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
কী বলছে পরিবহন মালিকেরা
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দেওয়া ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ আছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েতউল্লাহ।
তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা গাড়ি বন্ধ করিনি। গাড়ি চলার নির্দেশ আছে।’
এনায়েত উল্লাহ আরও বলেন, ‘যদি রাস্তার অবস্থা ভালো থাকে তবে গাড়ি চলবে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তখন দেখা যাবে। তখন বন্ধ থাকতে পারে।’
আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের কাছে কয়েকটি দূরপাল্লার গাড়ির চালক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) শুধু সকালের প্রথম দুটি ট্রিপ চলতে পারে। সারা দিন গাড়ি বন্ধ থাকবে।
ঢাকা–যশোর রুটের একটি পরিবহন কোম্পানির গাড়িচালক বলেন, তাঁদের সকাল ৬টা ও ৭টার গাড়ি ঢাকা থেকে ছাড়বে। অন্য গাড়ি সারা দিন চলবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
কমপ্লিট শাটডাউনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশের পাশাপাশি ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
যা বলছে সরকার
গতকাল সন্ধ্যায় জাতীর উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার নিয়ে উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না—এমন আশার কথাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।
এই আইন প্রক্রিয়া সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না