শিরোনাম
শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলার প্রস্তুতি শেখ মুজিব দেশে ফ্যাসিবাদের জনক : মির্জা ফখরুল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর হাতে পিটুনি

হাতে লাঠি, মুখে স্লোগান– ঢাবি ও জাবিতে ‘প্রবেশ নিষেধ’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪
  • ৫৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- গিয়ে কী দৃশ্য দেখব, তখনও জানি না। সোমবার দিবাগত রাতে; রাত নয়, বলা যায় মধ্যরাতে মারাত্মক আক্রমণ হয়েছে আন্দোলনকারীদের ওপর। বিকেলে এক দফা হামলার পরে রাতের নিরাপত্তার জন্য ছেলেমেয়েরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আশ্রয়ের জন্য জড়ো হয়েছিল। সন্ত্রাসীদের দেখে তারা উপাচার্যের বাড়ির আঙিনায় ঢুকে পড়ে। উপাচার্য দরজা খোলেন না। ছাত্রছাত্রীরা পুলিশ ডাকে। তারা ঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের বাইরে; কিন্তু এলো না। শিক্ষার্থীরা প্রক্টরসহ বড় বড় শিক্ষককে ডাকল, কেউ ফোন ধরলেন না। তারা মার খেলো। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ লুৎফুল এলাহী গুলিবিদ্ধ হন।তাদের আর্তচিৎকার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে হলের ঘুমন্ত ছাত্ররা উঠে বসল। দলে দলে চলে এলো ভাইবোনকে বাঁচাতে। ভয়ের দৃশ্যটা বদলে গেল সাহসে। যে পুলিশ এতক্ষণ দূরে ছিল, তারা ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ল সাঁজোয়া যান নিয়ে, টিয়ার শেল নিয়ে। ভোররাত পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা লড়ল এবং ক্যাম্পাসকে মুক্ত করল। পুলিশ আবার সরে গেল দূরে, ছাত্রলীগের একাংশ যোগ দিল আন্দোলনে, আর মারমুখী অংশটা ভয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ল।

জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে নোটিশ ঝুলল– ছাত্রলীগের প্রবেশ নিষেধ, আদেশক্রমে ছাত্রসমাজ।

মঙ্গলবার দুপুরের কথা। সাভার পেরোতেই দৃশ্যপট বদলে গেল। পিএটিসি থেকে রাস্তা বন্ধ। কী হয়েছে? দূর থেকে দেখা গেল নীল প্যান্ট-সাদা শার্ট ছেলেরা আর আকাশি ও সাদা পোশাকের স্কুলড্রেস পরা মেয়েরা। তাদের অনেকেরই হাতে লাঠি। সাধ্যমতো যে যেমন পেরেছে, তেমন লাঠি জোগাড় করেছে। পিঠে স্কুলব্যাগ। মিছিল নিয়ে তারা চলেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে। দুই কৈশোর পেরোনো সদ্য তরুণ স্লোগানের জবাব দিচ্ছে। তাদের বললাম, ‘কোথায় যাচ্ছ, কেন যাচ্ছ?’ একজনের জবাব, আজ আমাদের পরীক্ষা ছিল, কিন্তু আমরা চলে আসছি জাবির ভাইয়া-আপুদের কাছে। একেবারে নবীন তরুণ। এই বয়সে চাকরি বা কোটা বা রাজনীতির টান এদের মনে লাগার কথা না। তাহলে কেন এসেছে? কেন তাদের হাতে উঠে এসেছে লাঠি?

এর জবাব পেলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে। সেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। রংবেরঙের পোশাকের মধ্যে কেমন বেমানান লাগার কথা স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম। কিন্তু মনে হচ্ছে সাদা, নীল, আকাশি ফুল যেন তারা। মনে পড়ল মুক্তিযুদ্ধের গান: মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি…। আজ আর ফুলের প্রহরী মুক্তিযোদ্ধারা নাই; নাই মহান কোনো নেতা বা সেনাপতি। নিজেদের জন্য আছে কেবল তারাই।

আন্দোলন চলছে, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জমায়েত। তারা যখন ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে, লাঠি হাতে রোদের মধ্যে ঢাকা-আরিচা সড়কে উঠে পড়ল, তখন এদিকে সাভারের পরের পিএটিসি, ওদিকে নবীনগর– সব একাকার।

রাস্তার এক পাশটায় আটকে থাকা শত শত গাড়ি, আরেক পাশে মিছিল আর স্লোগান: শত শহীদের রক্তে কেনা/দেশটা কারও বাপের না ইত্যাদি। সেই মিছিলের একটি হাতও ফাঁকা পাওয়া গেল না। বেশির ভাগেরই হাতে গাছের ডাল ভাঙা কিংবা বাঁশের লাঠি। কারও কারও হাতে লোহার পাইপ বা রড। কারও মাথাতেই হেলমেট নেই।
জিজ্ঞেস করি আবার আরেকজনকে, ‘তো, লাঠি কেন হাতে?’ উত্তর এলো, ‘গত রাতে আমাদের বাঁচাতে কেউই আসেনি, আজ তাই আমরাই আমাদের আত্মরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছি।’ শুনতে পেলাম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আহতদের দলে ছাত্রলীগের কর্মীরাও আছে।

এবার চাইলাম, আন্দোলনরতদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ঋদ্ধ, সাংবাদিক নায়ীম বললেন, ‘আসলে গত রাতের পর আর নেতা বলে কিছু নেই ভাই। এখন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই সব।’ প্রতিপক্ষের নেতাদের কথা জিজ্ঞেস করলাম। বলল, গত রাতের প্রতিরোধের পর বহিরাগতদের সঙ্গে তারাও পালিয়েছে।

জাবির টিএসসির সামনে একটি এবং ট্রান্সপোর্ট এলাকায় ব্যারিকেডের সামনে আরেকটি পোড়া মোটরসাইকেল দেখে বুঝলাম, কেন তারা পালিয়েছে। কিশোর-কিশোরীরাও যে হাতে লাঠি তুলে নিয়েছে, তার উত্তরও বোধ হয় এর মধ্যেই লুকানো আছে। তাদের হাতে এই লাঠি তুলে দিয়েছে আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ। নিরীহদের নয়, সন্ত্রাসীদেরই তারা যখন মদদ দিচ্ছে, পাহারা দিয়ে রক্ষা করছে, তখন সাধারণ ছেলেমেয়েরাই নিজেদের রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে। আগের রাতের হামলা ঠেকানোর আত্মবিশ্বাস তাদের একটা নতুন দিন দিয়েছে।

এর মধ্যেই খবর এলো, সারাদেশে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। শোকের ছায়া তখনও প্রতিবাদের তাপ ঢেকে দিতে পারেনি; বরং মনে হলো, স্লোগানগুলো আরও জোরালো হচ্ছে, হাতের লাঠিগুলো আরও ওপরে উঠে পড়ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions